Advertisement

উন্মেষ

চুপকথার জঙ্গলে হেঁটে যায় হরিণবর্ণ স্বর : নাফিউল হক

nafiul weeklyunmesh.com

যখন অঙ্গার রাখে ছায়ার গর্ভে

চর্মছিদ্রে আজও জমে থাকে
সে-সব অপার ঋণ,
যা মুছে গেলে মৃত সুরটুকু
আরও নিকটতর হতো।
শিরায় শিরায় বয়ে যায় অস্বীকৃত দিনপঞ্জি—
মনে হয়, জন্মাবার আগে কেউ আগুন ধরিয়ে গেছে।

শ্রাবণের রাতে বালির নিচে
মুখ গুঁজে শুয়ে ছিল যে,
সে-ও তো একদিন জানতে চেয়েছিল
মৃত্যুর পোশাক কেমন হয়!
এখন যদি বলি— ভুল পথে হাঁটার মধ্যেই ছিল
আমার আত্মদর্শনের শেষ অবকাশ— বিশ্বাস করবে?

আমি হাত রেখেছিলাম কালো মাটির কবন্ধে,
যেখানে নিঃশ্বাস ফেলে গেছে,
আমার পূর্বপুরুষের পলাতক পুণ্য।

জন্মের পূর্বে যে অনুপস্থিতি

জলে মুখ রাখলে মুখের ভিতরেও জল ঢুকে যায়,
এই সত্য জানত না তারা—
যারা নাম রেখেছিল আলো আর ধ্বংসের মাঝখানে।

অমলিন মাংসের কাঠামো
যখন সময়ের উচ্ছিষ্টে ভরে যায়,
তখন আত্মা বলে, আমি তো এখানে ছিলাম না,
আমাকে ডেকেছিল তারা, পাথর ভেবে—
আর আমি হয়ে উঠেছিলাম সংলাপের ছিন্ন বাঁধন।

নাভির গর্তে যে রক্ত জমে আছে এতকাল
তার প্রতিটি জন্মই ভুল উচ্চারণের ফলাফল।
আর মৃত্যু—
একটি অনুপস্থিত নামের জন্য রচিত গোপন গান।

যারা ফিরে যায় না, তারা থেকেই যায় চামড়ার নিচে

আমি বারবার খুলেছি দরজা—
কিন্তু জানালার বাইরে দাঁড়িয়ে ছিল না কেউ।
থেকে যাওয়া, চলে যাওয়ার ছায়াতেই জন্ম নেয়
আমার দেহজ সংশয়।

এই কণ্ঠস্থ যন্ত্রণা নিয়ে—
আমি ছুঁয়ে যাই নিজের ফুসফুস,
যেখানে এখনও জমে আছে মৃত গানের ধ্বনি।

শরীর আর বিশ্বাস—
এ দুইয়ের মাঝে বসে থাকে যে অন্ধ মুখ,
সে কখনও হাসে না,
শুধু তার দাঁতের ফাঁকে
একটি মৃত ঘোষণাপত্র লেগে থাকে।

আমি সেই ঘোষণাকে পোড়াই—
প্রতি রাত্রির প্রান্তে,
যতক্ষণ না আর কিছুই থাকে পোড়ানোর মতো।
শুধু থাকে এক শ্বাস—
যে নিজেই নিজের কবর খোঁজে পাঁজরের নিচে।

চুপকথার জঙ্গলে হেঁটে যায় হরিণবর্ণ স্বর

কোনো এক বিস্মৃত দিনরাত্রির মাঝখানে,
আমি শব্দের কান্না শুঁকি—
ফসিল হয়ে যাওয়া রেখা বেয়ে উঠে আসে ঘুমছাওয়া গন্ধ।
সেই গন্ধে নাকি জন্ম নেয়, ভেতরঘরে বাস করা হরিণবর্ণ স্বর।
এ এক ধরনের কোলাহল,
যেখানে আত্মা নিজের মুখটাকে আয়নায় চেনে না।
আমি হাঁটি— একটা অদৃশ্য জঙ্গলের দিকে,
যেখানে চুপকথারা পাখির ছায়া হয়ে বাসা বাঁধে।
পাখি জীবন?
সে তো নিঃশ্বাসের ভুল বানান,
অথবা একটা মৃত বাক্যের ভেতর শুয়ে থাকা অনুমানহীন ঘুম।

Post a Comment

0 Comments