Advertisement

উন্মেষ

লেখক পাঠকের সংযোগ স্থল তৈরি না হলে কোন লেখাই পাঠ যোগ্য হয় না

rina pondit weeklyunmesh.com
উন্মেষ সাহিত্য সাময়িকী’র নির্ধারিত প্রশ্নে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন কবি রীনা পন্ডিত। তার প্রথম প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ, 'পরাণের গপ্প'। অন্যান্য বইসমূহ হলো; 'কষ্টজল', 'ঘুণপোকা এবং সে', 'দেখা হয়েছিল পড়ন্ত বিকেলে', 'শেষ ফাগুনের গল্প', 'কেউ কথা রাখেনা', ‘মন দিতে চাই’, ‘গোধূলির মায়া’ ও ‘মন ডুবেছে গোপনে’। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন জান্নাতুল ফেরদৌস—

কেমন আছেন? বর্তমানে কোন বইটি পড়ছেন?

রীনা পন্ডিত : ভালো আছি। আপনিতো জানেন আমি হসপিটালের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদে চাকরি করছি, তাই পেশাগত নানান ব্যস্ততার মাঝে খুব বেশি পড়া হয়না। এর মাঝও সুযোগ পেলেই সমসাময়িক সব লেখাই পড়ি। নতুনদের বা উদীয়মান লেখকদের লেখা বেশি পড়ি। আর সমসাময়িক সামাজিক ফিচারগুলো পড়ার চেষ্টা করি।

আপনি লেখেন কেন?
রীনা পন্ডিত : হাওর অঞ্চলে আমার জন্ম (নেত্রকোনা)। নদী, জল, পাহাড় আর প্রাকৃতিক পরিবেশে নিজের ভেতর সহজ সরল মানুষের জীবনাচারে অভ্যস্ত! তাই  ছোটবেলা থেকে খুব আবেগপ্রবণ মানুষ। পাহাড়, নদী আর জলের সাথে সখ্যতা থেকেই আমার লেখালেখি শুরু। সমাজের অনাচার বৈষম্য মানুষে মানুষে হানাহানি অত্যাচার নিপিড়ন সব কিছু যখন পীড়াদায়ক হয় আমার কলম তখন সরব আর প্রতিবাদী হয়ে উঠে। রক্ত টগবগিয়ে উঠে। গণ মানুষের বেদনা বঞ্চনা আর অমানবিক জুলুম নির্যাতন আমার লেখার উপজীব্য। সহজ সরল আবেগ অনুভূতি থেকেই লিখি।

কী ধরনের বিষয়বস্তু নিয়ে লিখতে স্বচ্ছন্দবোধ করেন?
রীনা পন্ডিত : একসময় গণ মানুষের আশা নিরাশা সামাজিক অবক্ষয় রাজনৈতিক কোন্দল আর প্রতিবাদী লেখা নিয়ে শুরু করলেও পরবর্তীতে পাহাড় নদী সাগর প্রাকৃতিক পরিবেশ উপজীব্য করে লিখতে শুরু করি এবং ভালো লাগে। ধীরে ধীরে প্রেমের কবি বা লেখক হয়ে উঠি। আমার কবিতা আর গল্পে প্রেম আর বিরহ বেশি প্রাধান্য পেয়েছে। প্রেম ভালোবাসা বিরহ ব্যর্থতার সহজ সরল আবেগ অনুভূতির প্রকাশ ঘটাতে ভালো লাগে।

লেখালেখির ক্ষেত্রে দেশি-বিদেশি কোন লেখক আপনাকে বেশি অনুপ্রেরণা যুগিয়েছে?
রীনা পন্ডিত : আমি কখনোই অগ্রজ কোন লেখককে অনুসরণ করিনি। আমি আমার মতো আলাদা হবার চেষ্টা করেছি। তবে সেসব লেখকদের লেখা ভালো লাগতো তারা হলেন; ভারতের সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, শক্তি চট্টোপাধ্যায়, সুকান্ত। আর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম তো আছেই। আর দেশের লেখকদের মধ্য নির্মলেন্দু গুণ, হেলাল হাফিজ, মহাদেব সাহা, শামসুর রাহমান।
তবে, রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ ও তসলিমা নাসরিন আমার প্রেরণা ও গাইড ছিলো। রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ ও তসলিমা নাসরিন আমার ভালো বন্ধু ছিল। তসলিমা নাসরিনের ময়মনসিংহ আমলা পাড়ার বাসায় আমি নিয়মিত যাতায়াত করতাম। আর রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ ছিল আমার কলম বন্ধু। বিভিন্ন সাহিত্য অনুষ্ঠানে কেবল দেখা হতো। তবে আমার পরিবার বন্ধুবান্ধব আমাকে লেখক হতে অনুপ্রাণিত করেছে।
লেখার সময় পাঠকের কোনো চাহিদার দিক বিবেচনায় রাখেন কি?
রীনা পন্ডিত : আমি সবসময় পাঠকের উপযোগী করে অর্থাৎ চেষ্টা করি আমার সব লেখাই যেন পাঠকের মনের কথা হয়। পাঠকের মনোজগতে প্রবেশ করার জন্যে পাঠকের পাঠ উপযোগী লেখাই সাধারণত লিখার চেষ্টা করি। সহজ সরল আবেগ অনুভূতির প্রকাশ এবং ভাষা প্রয়োগ, যা পাঠকের কাছে সহজেই যেন বোধগাম্য হয়। লেখক পাঠকের সংযোগ স্থল তৈরি না হলে কোন লেখাই পাঠ যোগ্য হয় না। তাই সবসময় পাঠকের ভালো লাগাকে প্রাধান্য দেয়া সর্বাগ্রে।

একজন পাঠক আপনার লেখা পড়বেন কেন?
রীনা পন্ডিত : লেখকের কথা যখন পাঠকের মনের কথা হয়ে উঠবে বা লেখকের লেখা পাঠকের মনোজগতে প্রবেশ করে নাড়া দেবে তখনই পাঠক সেই লেখকের লেখা পড়বে।

আপনার প্রিয় গল্পকার কারা? কেন প্রিয়!
রীনা পন্ডিত : শওকত উসমান আমার প্রিয় গল্পকার, যিনি সাম্প্রতিক সময়ের বিষয় নিয়ে লিখেছেন। তবে আমি গল্পের চেয়ে উপন্যাস বেশি পড়েছি। আমার প্রিয় ঔপন্যাসিক হুমায়ুন আহমেদ। তার লেখা সাধারণ গল্পগুলো অসাধারণ হয়ে উঠে ভাবনার জগতে নাড়া দেয়। তসলিমা নাসরিনের গল্প ভালো লাগে, কারণ বাস্তবতার অনুপম প্রকাশ ঘটে তসলিমা নাসরিনের গল্পগুলোতে!

এবারের বইমেলায় আপনার কী কী বই থাকছে?

রীনা পন্ডিত : এবারের বইমেলায় থাকছে আমার গল্পগ্রন্থ ‘মন ডুবেছে গোপনে। এছাড়া আমার নতুন, পুরাতন সব বই পাওয়া যাবে নব সাহিত্য প্রকাশনীর ৭৪৩/ ৭৪৪ নং স্টল, বঙ্গনিউজ ডিবিসি ৬৯২ নং স্টল ও গণ প্রকাশনীর ৭২২ নং স্টলে।

বইমেলায় গিয়েছেন কি? পরিবেশ কেমন দেখলেন?
রীনা পন্ডিত : প্রায় প্রতিদিনই বইমেলায় গিয়েছি। বইমেলা লেখক পাঠকের মিলন ক্ষেত্র। পরিবেশ ভালো। পাঠকের সমাগম বেড়েছে। ছুটির দিন গুলোতে উপচে-পরা ভীড় দেখা যায়। তবে ক্রেতার সংখ্যা নগন্য। পাঠক পূর্ব নির্ধারিত স্টলে যায় এবং পরিচিত জনের বই সংগ্রহ করে কেবল। এছাড়া বাচ্চাদের বই বিক্রি হচ্ছে বেশি। কবিতার বইয়ের চাহিদা কম। গল্প, উপন্যাসের বিক্রি বেশি।

বইমেলায় আগত পাঠকদের উদ্দেশে কী বলতে চান—
রীনা পন্ডিত : পাঠকের উদ্দেশ্যে একটা কথাই বলা, তা হলো— বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। নিজের বাড়িতে পারিবারিক ছোট্ট একটি পাঠাগার গড়ে তোলার লক্ষ্যে বই সংগ্রহ করতে হবে। উপহার হিসেবে বই, শ্রেষ্ঠ উপহার সেই অনুভূতি মনে জাগ্রত করতে হবে। বইয়ের প্রতি শ্রদ্ধা ভালোবাসা বাড়াতে পাড়ায় বা মহল্লায় পাঠচর্চা বা পাঠ চক্রের আয়োজন করতে হবে। প্রতিদিন কিছু সময় বই পড়তে হবে। পাঠাগার গড়ে তুলতে একে অন্যকে সহযোগিতা করতে হবে।

Post a Comment

0 Comments