Advertisement

উন্মেষ

নিজের চিন্তার প্রসব বেদনা থেকে মুক্তি পেতে লিখি : আফরোজা জাহান

উন্মেষ সাহিত্য সাময়িকী
উন্মেষ সাহিত্য সাময়িকী’র নির্ধারিত প্রশ্নে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন কথাসাহিত্যিক আফরোজা জাহান প্রভা। তার প্রকাশিত বইসমূহ; আত্মবোধের সেলাইফোঁড় ( ২০২১), ঘ্রাণ ( ২০২২), দৃশ্যের অদৃশ্য ভাঁজ ( ২০২৩) ও ক্ষয়ে যাওয়া সময়। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন জান্নাতুল ফেরদৌস—

কেমন আছেন? বর্তমানে কোন বইটি পড়ছেন?
আফরোজা জাহান : আলহামদুলিল্লাহ, চারপাশের নানা দুরবস্থা দেখলে মনে হয় অনেকের চেয়ে বেশ আছি। অমর একুশে বইমেলা ২০২৫ সালের বইমেলায় প্রকাশিত নতুন কিছু বই সংগ্রহ করেছি৷ আমি অনেক নতুনদের লেখাও পড়ি৷ সবে শেষ করলাম নবীন লেখক লাবিবা সালাতের রোমান্টিক উপন্যাস ‘প্রশান্তিকা’৷ শেষ করেই ধরলাম আরেক নবীন লেখক আব্দুল মূঈদের ক্রাইম থ্রিলার ‘গোয়েন্দা ওসিঃ চক্রবুহ্য’।

আপনি লেখেন কেনো?
আফরোজা জাহান : প্রথমত নিজেকে মুক্তি দিতে। লেখাতে যেমন নিজের আশ্রয় খুঁজে পাই তেমনি লেখার মধ্য দিয়ে মুক্তিও দেই নিজেকে৷ সেই সাথে এটাও অস্বীকার করবো না, আমার চিন্তাটা অন্যকে জানানোর লোভও আমাকে তাড়িয়ে বেড়ায়৷ সেই লোভই আবার মনে সুপ্ত বাসনার জন্ম দেয়, যে যদি ভালো কিছু লিখতে পারি। এবং সেই লেখা পড়ে অন্তত একজন মানুষও যদি বিষয়টা নিয়ে ভাবে, সুন্দর বোধের উদয় হয় তবেই তো আমার লেখালেখি করা সার্থক৷ আমার জন্য এইসব নানাবিধ ভাবনার তাড়না থেকে বাঁচার একমাত্র পথ বা মুক্তি হচ্ছে লেখা৷

কী ধরনের বিষয়বস্তু নিয়ে লিখতে স্বচ্ছন্দবোধ করেন?

আফরোজা জাহান :  নারীর জীবন, মানুষের মনস্তত্ত্ব, মানসিক রোগ এবং সামাজের অসংগতি৷

লেখালেখির ক্ষেত্রে দেশি-বিদেশি কোন লেখক আপনাকে বেশি অনুপ্রেরণা যুগিয়েছে?
আফরোজা জাহান :  নির্দিষ্ট করে কারো লেখা পড়ে লেখালেখির প্রতি অনুপ্রাণিত হয়নি আমি৷ কিন্তু যখন কোন লেখকের ভালো চিন্তার প্রকাশ বইয়ের পাতায় দেখি অনুপ্রাণিত হই এবং কিঞ্চিৎ ইর্ষাও যে কাজ করে তাও অকপটে স্বীকার করি৷ এতো সুন্দর ভাবে কিভাবে পারেন তারা জীবন, কল্পনাকে শব্দ ও বাক্যের মিলনে ফুটিয়ে তুলতে!

লেখার সময় পাঠকের কোনো চাহিদার দিক বিবেচনায় রাখেন কি?
আফরোজা জাহান : আমি লেখালেখি জগতে নতুন বলা যায়৷ তাই বুঝি এই প্রতিযোগিতার যুগে টিকে থাকতে হলে পাঠকের চাহিদার দিকে নজর দেওয়াটা কতটা জরুরি এবং কিছু ক্ষেত্রে দেওয়াটাও উচিত৷ কারণ চাহিদা মতো লিখতে পারলেই সেই বই ও লেখক সহজেই পাদপ্রদীপের নিচে আসতে পারবে৷ বর্তমানে অনেক লেখকরাই পাঠকরা কী পড়ছে, কেমন লেখা চায় ভেবেই কিন্তু লিখছে। কিন্তু সত্যি বলতে আমি সেইসব বিবেচনা করে লিখিনা৷
প্রথমেই আপনাকে বলেছিলাম মূলত নিজেকে মুক্তি দিতেই আমি লিখি৷ তাই স্বার্থপরের মতো আগে নিজের চিন্তার প্রসব বেদনা থেকে মুক্তি পেতে চাই৷ মুক্তিই আমার লক্ষ্য৷ আর এমনিতে যতটুকু বুঝি দিন যত যাচ্ছে মানুষ ব্যস্ত হচ্ছে৷ বই পড়ার সময় মানুষ তাই সহজ, প্রাঞ্জল ভাষা খুঁজে৷ পাঠকের এই সহজপাঠ্য বই খোঁজার দিকটা মাথায় থাকে৷ আর আমি নিজেও সহজ ভাষাতেই লিখি৷ তাই পাঠক কি চায়, কিভাবে গ্রহণ করবে আমার লেখা সবসময় এই ভেবে অতিরিক্ত চাপ আমি নেই না৷
একজন পাঠক আপনার লেখা পড়বেন কেন?
আফরোজা জাহান : কিঞ্চিৎ কঠিন প্রশ্নই করে ফেললেন৷ ফেসবুকের কল্যাণে যারা নারী বন্ধুরা আছেন তাদের কাছ থেকে প্রায়ই শুনি, আমি যা লিখি তা তাদের মনের কথা৷ তারা লেখাটাকে তাদের বা চারপাশের জীবনের সাথে মেলাতে পারে৷ তাই বলবো, পাঠক আমার লেখা পড়বে নিজের না বলা কথা খুঁজে নিতে বা কেউ একজন তাদের কথা বলছে এই স্বস্তি থেকে৷ এছাড়াও আমার লেখার ভাঁজে ভাঁজে থাকা সহজবোধ্যতাও পাঠককে আকৃষ্ট করবে ইনশাআল্লাহ।

আপনার প্রিয় লেখক কারা?

আফরোজা জাহান : শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, নিমাই ভট্টাচার্য, সমরেশ মজুমদার, শাহাদুজ্জামান৷ নতুনদের মধ্যে ওবায়েদ হক, ওয়ালিদ প্রত্যয় ও ভালো লেখেন৷

ছোটবেলায় রকিব হাসান, শাহরিয়ার কবির, মুহাম্মদ জাফর ইকবাল ওনারা আমার প্রিয় ছিলেন৷ হয়তো এখানে তাঁদের কথা না বললেও চলতো৷ কিন্তু যাদের হাত ধরে পাঠের অভ্যাস হয়ে উঠেছিলো৷ তাদের প্রতি আমি ঋণী৷ তাই সুযোগ পেলে তাদের নাম উচ্চারণ করাও আমার কর্তব্য৷

ওনারা কেন প্রিয়?

আফরোজা জাহান : তাদের লিখন শৈলীর সৌন্দর্য। সহজাত ভাব। কারো বা চিন্তার গভীরতার সূক্ষ্ম শৈল্পিক প্রকাশ ভালো লাগে৷ সেই সাথে তাদের লেখা চরিত্রের মধ্য দিয়ে জীবন, বাস্তবতার দারুণ বোধ নিজের ভিতর তৈরি হয়েছে, হচ্ছে প্রতিনিয়ত।

এবারের বইমেলায় আপনার কি কি বই থাকছে?

আফরোজা জাহান : অমর একুশে বইমেলা ২০২৫ সালের বইমেলায় আমার চতুর্থ বই এবং দ্বিতীয় উপন্যাস ‘ক্ষয়ে যাওয়া সময়’ প্রকাশ পেয়েছে৷ বইটি প্রকাশ করেছে বারোমাসি প্রকাশনী৷ আর বাকি তিনটা বই প্রকাশ করেছে ঘাসফুল প্রকাশনী৷

বইমেলায় গিয়েছেন কি? পরিবেশ কেমন দেখলেন?

আফরোজা জাহান : এখন পর্যন্ত একদিনই যাওয়া হয়েছে৷ সেইদিন মেলার প্রথম দিন ছিলো। প্রথম দিন হিসাবে লোকসমাগম ভালোই ছিলো৷ প্রতিদিন যদি এমন সংখ্যক মানুষও মেলায় যান৷ এবং প্রত্যেকে একটা হলেও বই কিনেন তবে এবারের বইমেলা নিয়ে ভালো কিছু আশা করাই যায়৷ কারণ বিশ সালের পর থেকে মেলায় পাঠক সংখ্যা কমেছে৷ কমেছে বই বিক্রি৷

বইমেলায় আগত পাঠকদের উদ্দেশ্যে কি বলতে চান-
আফরোজা জাহান : পাঠকদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই আপনারাই লেখকদের প্রাণ৷ হ্যাঁ এটা ঠিক বেশিরভাগ লেখকরা মূলত নিজেদের তাড়না থেকেই লেখে৷ কিন্তু আপনারা তা গ্রহণ না করলে, সেই লেখা বলবো না মূল্যহীন হয় কিন্তু লেখাটার প্রাণ পায় না৷ তাই আপনাদেরকে কৃতজ্ঞতা ও ভালোবাসা জানাই৷

সেই সাথে এটাও বলতে চাই, অনেক ভালো ভালো লেখা বইমেলায় প্রকাশ পায় এবং পাচ্ছে৷ শুধু ফেসবুকের রিভিউ দেখে বা যারা আগেই প্রতিষ্ঠিত শুধু  তাদের বই কিনবেন না৷ সময় থাকলে স্টল গুলোতে ঘুরুন৷ এক-দুই পৃষ্ঠা পড়ে দেখুন৷ নতুনদের বইও সংগ্রহ করুন৷ তাদের লেখা নিয়ে গঠনমূলক আলোচনা ও সমালোচনা করুন৷ দয়া করে একেবারে নতুন লেখকের একটা বই পড়েই তাকে তালিকা থেকে বাদ দিবেন না৷  অন্তত তাকে ভালো করার সুযোগ দিন৷

ধন্যবাদ আপনাকে
আফরোজা জাহান : আমাকে কথা বলার সুযোগ করে দেবার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ উন্মেষ সাহিত্য সাময়িকীকে৷

Post a Comment

0 Comments