Advertisement

উন্মেষ

লেখার ক্ষেত্রে আমার অনুপ্রেরণা, অন্তর্গত বেদনা আর তাড়না : মাহমুদুর রহমান

উন্মেষ সাহিত্য সাময়িকী

উন্মেষ সাহিত্য সাময়িকী’র নির্ধারিত প্রশ্নে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন কথাসাহিত্যিক মাহমুদুর রহমান। তার প্রকাশিত বইসমুহ; মোগলনামা (দুই খণ্ড), ইতিহাসের পথে পথে, ফিরাক, অবিরাম বৃষ্টির শহরে, রাধেয়, শকুনি উবাচ, দ্রৌপদী, পঞ্চকন্যা, রঙ মিলান্তি, রুসওয়া ও বেলাভূমি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন কবি ও সম্পাদক সাজেদুর আবেদীন শান্ত—

কেমন আছেন? বর্তমানে কোন বইটি পড়ছেন?
মাহমুদুর রহমান : ধন্যবাদ উন্মেষকে। আমি ভালো আছি। কাজের ব্যস্ততা আছে কিছু। দেশের পরিস্থিতিও ঘোলাটে। তবে এর মধ্যেই যেটুকু থাকা যায়, ভালোই আছি। কাজের চাপ আর বইমেলার কারণে পড়া একটু স্তিমিত। তবে পড়ছিলাম চার্লি চ্যাপলিনের অটোবায়োগ্রাফি। প্রায় দুই মাস ধরে বইটা একটু একটু করে পড়ছি। অসাধারণ একটা কাজ।

আপনি লেখেন কেনো?
মাহমুদুর রহমান : কেন লিখি এর উত্তর দেয়া কঠিন। তবে আমার মনে হয় আমাদের সবারই কিছু বলার থাকে। সেই কথাগুলো বলার জন্যই লেখা। ধরুন মোগলনামা যখন লিখি, দেখেছিলাম মোগল আমল নিয়ে প্রচুর বই থাকা সত্বেও অনেক ভুল ধারণা আছে সেই সময় নিয়ে। সেইসব খণ্ডন করা বা আমি ঐ সময় নিয়ে গবেষণা করে যা পেয়েছি তা বলার একটা তাড়না কাজ করেছে। সেখান থেকেই বইটা লেখা।

 

রঙ মিলান্তি নামে একটা উপন্যাস আছে আমার। সেখানে আমি আমার সময়ের তরুণদের কথা বলতে চেয়েছি। তারা কেমন করে ভাবে, তাদের জীবন যাপন, ভাষা, স্বপ্ন এইসব নিয়েই বইটা। তো এই রকম অনেক কিছুই আমার বা আমাদের বলার আছে। আমি যা বলতে চাই তা লিখি। বলার জন্য লিখি। মুখে বললে সেটা হয়ত হারিয়ে যাবে। লেখা টিকে থাকে কোনো না কোনোভাবে।
 
কী ধরনের বিষয়বস্তু নিয়ে লিখতে স্বচ্ছন্দবোধ করেন?
মাহমুদুর রহমান : যেটা বললাম আগেই। আমার যেসব নিয়ে বলতে ইচ্ছা হয় তা নিয়েই লিখতে পছন্দ করি। স্বচ্ছন্দ আমি প্রবন্ধ-নিবন্ধে। তবে এর মধ্যে উপন্যাসও লিখেছি। গল্প বলার একটা ইচ্ছা আছে। সময়কে ধরে রাখতে পছন্দ করি।

ইতিহাসের বিভিন্ন কালপর্ব, মহাভারত—যা আমি জানি বা যা নিয়ে পড়াশোনা করি তা নিয়েই লিখতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি। সিনেমা নিয়েও আমার প্রচুর লেখা হয়েছে। কারণ সিনেমা দেখতে পছন্দ করি। বই, লেখক, সাহিত্য নিয়ে আলোচনা করতেও স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি।

লেখালেখির ক্ষেত্রে দেশি বিদেশি কোন লেখক আপনাকে বেশি অনুপ্রেরণা যুগিয়েছে?
মাহমুদুর রহমান : সেভাবে কেউ অনুপ্রেরণা দিয়েছে এমন বলব না। আমার অনুপ্রেরণা, আমার ভেতরকার না বলা কথা। অন্তর্গত বেদনা আর তাড়না। সময়, পরিবেশ ও প্রতিবেশও আমাকে প্রভাবিত করেছে। আর অনুপ্রেরণা যদি বলেন, সাহিত্যপাঠ শুরু রাশান লিটারেচার দিয়ে। দস্তয়েভস্কি, তলস্তয়, গোগোল, তুর্গেনিভদের সঙ্গে বাস করেছি দীর্ঘ সময়। গল্প বলা, মানুষের মনকে বুঝতে চেষ্টা করার বিষয়টা তাদের লেখা থেকে শিখেছি। শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় থাকবেন শুরুর দিকে। তার লেখা, লেখার ভাষা, মানুষকে পড়ার ভাষা অনুপ্রেরণা দিয়েছে। লেখাকে স্বপ্নের মতো করে তুলতে অনুপ্রেরণা দিয়েছেন সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, বুদ্ধদেব গুহ। বাস্তবতার কষাঘাত চিনেছি সমরেশ বসু, আখতাড়ুজ্জামান ইলিয়াস থেকে। হুমায়ূন আহমেদ থেকে সহজ কথা সহজ করে বলা। এইতো। আরো অনেক নামই যুক্ত হতে থাকবে।

লেখার সময় পাঠকের কোনো চাহিদার দিক বিবেচনায় রাখেন কি?
মাহমুদুর রহমান : পাঠক সহজে বুঝতে পারেন যেন এই বিষয়টা মাথায় রাখি নন-ফিকশন লেখার ক্ষেত্রে। তবে যা আমি বলতে চাই তা বলার ক্ষেত্রে ফিকশন, নন-ফিকশন কোনো ক্ষেত্রেই আপস করি না। লোকরঞ্জনের জন্য লেখা হয় না আসলে।

একজন পাঠক আপনার লেখা পড়বেন কেন?
মাহমুদুর রহমান : সেটা আমি বলতে পারব না আসলে। পাঠকই নানা সময় বলেন নন-ফিকশনে আমার লেখা সুখপাঠ্য। জটিল বিষয়কে সহজ করে বলতে পারি। উপন্যাসে মহাভারতকে একটু ভিন্ন দৃষ্টিতে দেখা, সমকালীনে এই সময়কে ধরা—এসব পাঠক পছন্দ করেছেন। তাদের ভালো লাগে বলেই পড়েন বা পড়বেন। ভালো না লাগলে বাতিল করে দেবেন।

আপনার প্রিয় গল্পকার কারা? কেন প্রিয়!
মাহমুদুর রহমান : কিছু নাম তো এর আগেই এলো। ওনারাই প্রিয়। এছাড়া শওকত ওসমান, মাহমুদুল হক, ওয়াসি আহমেদ, সত্যজিৎ রায়, শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, প্রেমেন্দ্র মিত্র, প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়, বনফুল, ও হেনরি, আন্তন চেখভ, মার্ক টোয়েন, সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম থাকবেন।

সাধারণভাবে সবাইকে ধরেই বলি—এদের গল্পের বিষয়বস্তু ও গল্প বলার ধরণ ভালো লাগে। চরিত্রচিত্রনেও তারা অসাধারণ। এজন্য। ভালো লাগে।

এবারের বইমেলায় আপনার কি কি বই থাকছে?
মাহমুদুর রহমান : নতুন পুরনো মিলে ১২টা বই থাকছে। মোগলনামার নতুন (পরিবর্ধিত ও পরিমার্জিত) সংস্করণ এসেছে গত নভেম্বরে। নতুন বই আছে চারটি। মেলার আগে ডিসেম্বরে এসেছে উর্দু দ্বিপদীর সংকলন (টীকাসহ) ‘ফিরাক’। প্রকাশ করেছে স্বরে অ প্রকাশনী। জ্ঞানকোষ থেকে এসেছে ‘ইতিহাসের পথে পথে’। ইতিহাসের নানা কালপর্ব, ব্যক্তি, শহর ও ঘটনা নিয়ে প্রবন্ধ-নিবন্ধের সংকলন এটি। ৫০টির বেশি প্রবন্ধ-নিবন্ধ আছে। লেখাগুলো বণিক বার্তা পত্রিকার ‘সিল্করুট’ ক্রোড়পত্রে প্রকাশিত।

দুটো ফিকশন আছে। মহাভারতের পাঁচ নারীকে—হিড়িম্বা, সত্যবতী, অম্বা, সুভদ্রা ও গান্ধারী—নিয়ে একটা বই। নাম ‘পঞ্চকন্যা’। প্রকাশ করেছে নালন্দা। এটা উপন্যাস না আবার গল্প সংকলনও না। প্রত্যেককে নিয়ে আলাদা করে গল্প বলা হয়েছে। নভেলাও বলা যায়। মহাভারতের বিস্তৃত পরিসর থেকে তাদের বের করে এনে কাছ থেকে দেখার চেষ্টা।

আর অধ্যায় প্রকাশনী থেকে এসেছে সমকালীন উপন্যাস ‘অবিরাম বৃষ্টির শহরে’। এটা মূলত আমাদের এই সময়ের মানুষ ও শহরের গল্প। ঢাকা আর সিলেটের পটভূমিতে গল্পটা বলা।

বইমেলায় গিয়েছেন কি? পরিবেশ কেমন দেখলেন?
মাহমুদুর রহমান : গিয়েছি। নিয়মিতই যাচ্ছি। আমার পরিবেশ খারাপ মনে হয়নি। তবে নিরাপত্তা ব্যবস্থা একটু ঢিলেঢালা। আরেকটু সতর্কতা আশা করি। বইমেলা সেটা দাবীও করে। স্টলবিন্যাস নিয়ে আমার কোনো অভিযোগ নেই। তবে প্রকাশকরা বলছেন বিক্রি কম। সেটারও আসলে নানা কারণ আছে। তবে আশা করছি পাঠক বই কিনতে শুরু করবেন।

বইমেলায় আগত পাঠকদের উদ্দেশ্যে কি বলতে চান—

মাহমুদুর রহমান : প্রথমত বইমেলা যেহেতু বইকে কেন্দ্র করে আর আমরা লেখক, তাদের বলব বই কিনতে। দাম বেশি মনে হলে দুজন মিলে একটা কিনুন। কিন্তু কিনুন। পাশাপাশি অন্যকেও উৎসাহ দিন। বই বা লেখালেখি নিয়ে এখন অনেক ভালো কাজ হচ্ছে। এই যে উন্মেষ থেকে আপনারা খুঁজে বের করছেন লেখকদের, তাদের বই নিয়ে কথা বলছেন, এরকম আরো অনেকে করছে। তো পাঠকদেরও বলব, ভালো লেখা পড়ুন আর তা ছড়িয়ে দিন। এতে লেখদের পাশাপাশি আমরা সবাই উপকৃত হবো। ভাবতে শিখব। তাহলে চারপাশটা বদলে যাবে। পাঠের বিকল্প তেমন কিছু নেই। প্রতিদিন ১০ পাতা হলেও পড়ুন।

Post a Comment

0 Comments