Advertisement

উন্মেষ

কমল কুমার তাঁতী-এর পাঁচটি কবিতা | অনুবাদ : বাসুদেব দাস

Kamal-Kumar-Tanti weeklyunmesh.com

বাজারে শামুক

বাজারগুলিতে
সেদিন ছিল
নীলামের দিন

বাজার ঘুরলাম। দেখলাম
নীলামের নীতি আর দুর্নীতি

ফেরার পথে
আমার পেছন পেছন আসছিল
একটি শামুক

শামুকটা আমাকে দেখে
বলতে শুরু করল-

বাজারগুলির পথঘাট
বড় পিছল

শরীরে যদি শক্তি নেই
যদি নেই ধনের বল

বাজারে একদিন তুমি নিজেই
নীলাম হয়ে যাবে

আমি ভাবতে শুরু করলাম -

বাজারে বাজারগুলির যুদ্ধ
না বাজার এবং মানুষের যুদ্ধ

না মানুষে মানুষে
অসমান যুদ্ধ

দুই মোষের যুদ্ধে
বিরিণার মরণ
পরে সবার।

টীকা : বিরিণা-এক ধরনের দীর্ঘ ঘাস।

মাটির টুকরো

নিচের দিকে মুখ করে মাটির টুকরো কুড়িয়ে নিচ্ছিল
ঘোলা চোখ দুটোতে জ্বলছিল ক্ষুধা আর তৃষ্ণা
কার জন্য পথ চেয়ে রয়েছে বেদনাকাতর এই নারীর চোখজোড়া

আমরা বুদ্ধিজীবীরা কোনো সমাধান দিতে পারি না
একই কথা বারবার ঘুরিয়ে ফিরিয়ে আলোচনা করা ছাড়া

আমরা নিচের দিকে মুখ করে মাটির টুকরোগুলো কুড়িয়ে নিতে লাগলাম
কাঁচামাটির গন্ধে আমাদের প্রত্যেকের মাথা ঘুরে উঠল

চোখের দিকে সোজাসুজি তাকিয়ে আমার মনে হল
আমরা মাটি থেকে ,কাঁচা মাটির গন্ধ থেকে কত দূরে।

নিরর্থক
     
অর্থ না থাকা নাকি নিরর্থক–
লোকেরা বলে
এই পৃথিবীতে নিরর্থক কথার কোনো অর্থ নেই, সংজ্ঞা নেই
লোকেরা বলে

সন্দেহ জাগে আমার–
‘নিরর্থক’–এই কথাটার মানে কী
কে সিদ্ধান্ত নেয় কোন কথাটা নিরর্থক
কে আরোপ করে সিদ্ধান্ত গুলি–মানুষের ওপরে
কে দেয় অনুমতি প্রশ্রয় এবং কে করে সামুহিকীকরণ
সমত্ত কথায় সন্দেহ জাগে আমার–

সন্দেহগুলি দূর করার জন্য একটি অনুসিদ্ধান্তে এলাম
এই সমস্যাটির পরিপূরক একটি অনুসিদ্ধান্ত–
কোন কথাগুলির অর্থ রয়েছে বা নিরর্থক কিম্বা অর্থপূর্ণ
সে বিষয়ে কেউ নিজের সিদ্ধান্ত আরোপ করতে পারেনা

কথাগুলি অথবা লোকের কথাগুলি একদেশদর্শী হতে পারেনা
কথাগুলির অর্থ অথবা নিরর্থ বিচার করার জন্য
একটি মাত্র দৃষ্টিকোণ থাকতে পারেনা–
ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে প্রতিটি কথার অর্থ/নিরর্থ ভিন্ন

একই কথা একেক সময়ে ভিন্ন মানুষের জন্য
অর্থপূর্ণ বা নিরর্থক হয়ে উঠে/উঠতে পারে

নিরর্থক বলে কোনো কথাই আসলে থাকতে পারেনা
কিম্বা অর্থ শব্দটির কোনো প্রয়োজন নেই

কথাগুলো একই–
কথাগুলিতে যে সবসময় অর্থ থাকতে হবে
অথবা অর্থপুর্ণ/নিরর্থক হতে হবে, তার কোনো ‘মানে’ নেই

অ-যৌন/২

আগন্ভূকের হাত-তালির উৎকট শব্দে আমি মাথা তুলে তাকালাম।
ঘুমে-কাতর ঢুলঢুলে লাল চোখ আর কানফুলি নিয়ে এক নপুংসক

আমার দিকে তাকিয়ে দাঁত বের করে হাসছে আর হাত মেলে পয়সা চাইছে।

কোলাবার অভ্যস্থ পয়সাওয়ালা–এলিটরা বিরক্তি আর
উৎসুকতার সঙ্গে আমার দিকে তাকাল । মুখে রহস্যময় হাসি।

সেই চাহনি আর হাসির ইঙ্গিতঃ

তাহলে কোলাবায় আরও একজন ভিখারির সংখ্যা বাড়ল।
তাহলে কোলাবায় আরও একজন নপুংসক বাড়ল।

পথিকদের মুখে হাসি ছড়িয়ে পড়লঃ হ্যাঁ কথাটা, হ্যাঁ,
পয়সাওলা মানুষদের মধ্যেও ভিখারি এবং নপুংসকরা
বেঁচে থাকে।

আমি নপুংসকটার দিকে তাকিয়ে হাসলাম এবং
আমার শূন্য ভিক্ষার পাত্রটা আঙ্গুল দিয়ে দেখালাম।

তারমুখে হাসি দেখা গেল, বলতে লাগল, 'ভাই শোন,
চিন্তা কর না। কোলাবার এই পয়সাওলা মানুষগুলিও
আমাদের মতোই। হয় নপুংসক, না হয় বেশ্যা, ভিখারি, না হলে
গুণ্ডা, মাফিয়া, না হলে কল-গার্ল। এসো ভাই, আমরাও
কোলাবার এই পয়সাওলা–এলিটদের দলে সামিল হই।'

এক’পা-দু’পা করে আমরাও কোলাবার নপুংসক-পয়সাওলা
এলিট-ভিখারি এবং বেশ্যাদের দলে যোগ দিলাম।

টীকা : কোলাবা-মুন্বাই মহানগরীর সবচেয়ে সম্ভ্রান্ত অঞ্চল।

ঘরে যখন উনুন জ্বলে না

ঘরে যখন উনুন জ্বলে না
দেশের শাসক বলেন,
ম্যাকডোনান্ডে যাও, পেট ভরে খাও গে–
ঘরে যখন ক্ষুধার্ত শিশুর কান্না শোনা যায়
দেশের শাসক বলেন, মোবাইল সিম কিনে আন, সঙ্গে ফ্রি ডাটা
ঘরে যখন ক্ষুধার্ত মানুষের মৃত্যু হয়
দেশের শাসক বলেন,
সে হিন্দু না মুসলমান আগে ঠিক করে নাও.
ঘরে যখন গর্ভবতী নারীর মৃত্যু হয়
দেশের শাসক বলেন,
সেই নারীকে ধর্ষণ করে জ্বালিয়ে দেওয়া উচিত ছিল
ঘরে যখন মানুষ মানুষকে কাটার জন্য ঘুরে বেড়ায়
দেশের শাসক বলেন,
এসো আমরা ওদের জমিটুকু কেড়ে নিই
ঘরে যখন উনুন জ্বলে না
দেশের শাসক বলেন,
এই নরাধম বোধহয় গরু বা শুয়োর খেয়েছে
মেরে ফেলা হোক এই নরাধমকে
ঘরে যখন উনুন জ্বলে না
দেশের শাসক বলেন,
ভোটটা আমাকেই দিয়ো। কেন না
আমিই তোমাদের একমাত্র ত্রাণকর্তা।
 
কবি পরিচিতি : অ্যাষ্ট্রোনমি এবং অ্যাষ্ট্রোফিজিক্সের গবেষক কমল কুমার তাঁতী ১৯৮২ সালে জন্মগ্রহণ করেন। শ্রী তাঁতী ইংরেজি এবং অসমিয়া ভাষাতে লিখেন। তিনি ২০০৮ সালে মুনীন বরকটকী পুরস্কার লাভ করেন। তার কাব্যগ্রন্থ ‘মারাংবুরু আমার পিতা’র জন্য ২০১২ সালে সাহিত্য আকাদেমি যুব পুরস্কার লাভ করেন।

Post a Comment

0 Comments