তাড়াহুড়োর স্বভাব নন্দিনীর নেই। তবু তর সইছে না। চারপাশের নিরবতার গুঞ্জনে মগ্ন সে। স্তব্দতার আবরনে প্রকৃতির লীলা উপলব্ধির মাধ্যমে পৃথিবী থেকে তিন লক্ষ চুরাশি হাজার চারশত কিলোমিটার উঁচুতে মাইনাস একশত তিয়াত্তর ডিগ্রী তাপমাত্রার শীতল মায়াঘেরা রহস্যময় জনমানবহীন ধুসর চাঁদের বুক স্পর্শ করে নিন্দনী। বিজয়ের আবেগে অনুভবহীন শিহরনে মানব মুক্তির আপার আনন্দে চাঁদের মাটিকে অত্যান্ত আপন মনে হয়। মনে হয় গ্রহণ করেছে। এই মাটি তাকে গ্রহণ করেছে। চাঁদের মাটি গায়ে মেখে পৃথিবীর মাটির গন্ধ উপভোগ করে নন্দিনী। মনে পরে শৈশবের কথা। নরম তুলতুলে মাটি দিয়ে পুতুল বানিয়ে মায়ের অগোচরে চুলায় ফেলে দিত।
পরবর্তীতে ছাই থেকে পুতুল খুঁজে পাওয়ার নির্মল আনন্দ।
নন্দিনীর আগ্রহ মহাকাশের রহস্যময়তায়। চড়াই উৎরাই পেড়িয়ে স্বপ্নপূরণে চন্দ্রযানের মাধ্যমে পাড়ি জমায় চাঁদের বুকে। চাঁদে পা রাখার পরই মনে হয় এ যেন পৃথিবীর বাইরে তার আরেকটা ঘর।
চাঁদের আলো-ছায়ার খেলায় প্রতিটি গহ্বর, প্রতিটি পাহাড় যেন তার দিকে মায়াবী হাত বাড়িয়ে ডাকে। নন্দিনীর সাথে পরিচয় হয় এক রহস্যময় সত্ত্বার। নাম তার 'চাঁদ'। চাঁদের প্রতীকী আত্মা। চাঁদের আলো-অন্ধকারের মিশেলে তৈরি এক অনন্য অস্তিত্ব। চাঁদ কথা বলে না। নন্দিনীর মনে হয়, তার প্রতিটি ইশারা, প্রতিটি চাহনি যেন একটি ভাষা। যা সে বুঝতে পারে।
চাঁদে কাটানো প্রতিটি মুহূর্তে নন্দিনী আরো বেশি উপলব্ধি করে পৃথিবীতে ফেরার ইচ্ছা ফুরিয়ে যাচ্ছে। চাঁদের প্রেমে এমনভাবে আবদ্ধ হয়ে পড়ে ফিরে যাওয়ার কোনো ইচ্ছেই থাকে না। চাঁদের একাকীত্বের মাঝে খুঁজে পায় অদ্ভুত প্রশান্তি যেন এটাই তার প্রকৃত আশ্রয়। নন্দিনী চাঁদের বুকে
চিরকাল থেকে যায়। পৃথিবীতে নন্দিনী হয়ে উঠে মহাজাগতিক মানবী। মানব সভ্যতার কল্যাণে চাঁদকে ভালোবেসে নিজকে উৎসর্গ করা অনন্য মানবী।
চাঁদের মাটিতে বসে পুরনো স্মৃতিতে ডুবে যায় নন্দনী। হাতের মুঠোয় ধরা ধুলোর কণা শৈশবের পুতুলের মতোই। মনে পড়ে যায় নিঃশব্দ দুপুরের কথা। যখন মায়ের কাছ থেকে লুকিয়ে পুতুল বানিয়ে নিজের জগতের রানী হয়ে উঠত। চাঁদে চারপাশের নির্জনতায় সে আবার সেই ছোট্ট মেয়েটির মতো বোধ করে।
তার সামনে ক্রম আঁধারে মিলিয়ে যাওয়া প্রান্তর থেকে হঠাৎ ভিন্ন অনুভূতি ভেসে আসে। চাঁদের রহস্যময় শক্তি তাকে আহ্বান জানাচ্ছে। মনে হয় এই নিরবতা কোনো শূন্যতা নয় বরং একটি গোপন ভাষা যা একান্তই তার জন্য বরাদ্দ। হঠাৎ দূরে সে দেখতে পায় আলোকচ্ছটা। চাঁদের অন্ধকার অংশ থেকে তার দিকে ধীরে ধীরে এগিয়ে আসছে। নন্দিনী অবাক হয়ে আলোর দিকে তাকিয়ে থাকে।
ক্রমান্বয়ে আলোর মধ্যে রহস্যময় সত্ত্বার অবয়ব
স্পষ্ট হয়। আলোয় ভেসে থাকা সত্ত্বা তার দিকে তাকিয়ে আছে। নন্দিনীর হৃদয়ে অদ্ভুত অনুভূতি জাগে। তার চোখের গভীরে ছায়া-মাখানো মায়া। নির্জনতার স্পর্শে মোড়া আন্দোলিত আকর্ষণ যা নন্দিনীর মনকে টেনে নিয়ে যায়। সে কাছে এসে হাত বাড়ায়। নন্দিনী কিছু না বুঝেই তার হাত ধরে। মূহুত্বে মহাজাগতিক স্পর্শে শক্তির প্রবাহ অনুভব করে নন্দনী। যে স্পর্শ তার শরীর-মনে চিরকালীন বন্ধনের ছাপ রেখে যায়। চাঁদের আলোয় মিশে গিয়ে নন্দনীর মনে হয় তারই অপেক্ষায় ছিল এতদিন। তাদের মিলন যেন মহাজাগতিক পূর্ণতার অংশ।
নন্দিনী বুঝতে পারে চাঁদের মায়াময় রহস্যের প্রতি টান কেবল আকর্ষণ নয়। এতকালের শৈশব থেকে বেড়ে ওঠা বন্ধন। যা তাকে এখানে আটকে রাখে। পৃথিবীর কোনো শক্তিই যেন তাকে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে পারবে না। সেই মুহূর্তে নন্দিনী সিদ্ধান্ত নেয়, সে চিরকাল চাঁদের বুকে থেকে যাবে আলোর পাশে। যার অস্তিত্ব চাঁদের আলোয় মিশে একাকার হয়ে যায়।
পৃথিবীর প্রতি নন্দিনীর আকর্ষণ গভীর। পৃথিবী
তার শৈশব, স্মৃতি, আর অনুভূতির জন্মভূমি। আছে নরম মাটির ছোঁয়া, সবুজ ঘাসের মিষ্টি গন্ধ, পাখিদের গান ও মানুষের অস্তিত্বের উষ্ণতা।
চাঁদ সম্পূর্ণ ভিন্ন জগৎ। সবকিছুই রহস্যময়, মায়াময় এবং স্তব্ধতায় ঘেরা। চাঁদের মাটিতে নেই কোনো প্রাণের স্পন্দন। নেই কোনো ঋতু পরিবর্তনের চিহ্ন। ধূসর, শীতল মাটিতে কোনো বৃষ্টির শব্দ নেই, নেই পাখির কূজন। শুধু শূন্যতায় রয়েছে গভীর মায়া। নিরবতা দিয়েই চাঁদ তার আকর্ষণ প্রকাশ করে।
চাঁদে সময় যেন থমকে আছে। কোনো পরিবর্তন নেই। পরিবর্তন হীনতায় লুকিয়ে আছে অমরত্বের ইঙ্গিত। চাঁদ যেন জানে তাকে দেখতে পৃথিবী থেকে কত দূরের। তারপরেও সে পৃথিবীকে আলো দেয় স্নিগ্ধ জ্যোৎস্নায়। আলোর ভেতরে অমোঘ আকর্ষণ যা পৃথিবী থেকে সমস্ত কিছু পেছনে ফেলে নন্দিনীকেও নিজের দিকে টেনে এনেছে।
পৃথিবী হলো সেই সঙ্গী যে সবসময় তার উষ্ণতায় আবদ্ধ রাখতে চায়। যা তার জীবনকে অর্থময় করে তোলে। চাঁদ হলো সেই রহস্যময় প্রেমিক যার নীরবতায় অচেনা এবং শীতলতাতে নিঃশব্দ
ভালোবাসা মিশে আছে। পৃথিবী নন্দিনীকে বাঁচার অর্থ দেয়। চাঁদ বেঁচে থাকার মায়া থেকে মুক্তির অনন্ত অনুভূতি দেয়।
চাঁদ একেবারেই আলাদা অতীন্দ্রিয় জগৎ। চাঁদের বুকে সকালের সূচনা নেই। নেই সূর্যের আলোর জৌলুস। চাঁদে দিন আর রাতের দ্রুত পরিবর্তন নেই। চাঁদের একদিন পৃথিবীর চৌদ্দটি দিন আর রাতও প্রায় একই দীর্ঘতায়। দিনের আলোয় চাঁদের মাটি হিমশীতল ধূসরতায় ঢাকা রহস্যময় সাদাকালো ছবি। ছবিতে আছে অপার মায়া যা পৃথিবীর কোনো স্থানে পাওয়া যায় না।রাত হলে চাঁদের বুকে নেমে আসে আরেক জ্যোতি। যা পৃথিবী থেকে চাঁদের প্রতি আকর্ষণকে বাড়িয়ে তোলে। সেই অন্ধকারে তার পৃষ্ঠ ভরে ওঠে রুপালি আলোর আবেশে যা তুষারের মতো শীতল।
নন্দিনী আলোর ভেতর নিজেকে হারিয়ে ফেলে। রাতের গভীর স্তব্ধতা, চাঁদের আলোর প্রখরতা তার অন্তরকে মোহময় অনুভূতিতে ডুবিয়ে রাখে। চাঁদ তাকে ঘিরে অদৃশ্য আলোকমণ্ডল তৈরি করে যা পৃথিবী থেকে অনেক দূরে কিন্তু আশ্চর্য
ভালোবাসায় তাকে আবৃত করে রেখেছে।
নন্দিনী বুঝতে পারে পৃথিবীর উষ্ণতা আর জীবনের কোলাহল তাকে যতটা আকর্ষণ করে, চাঁদের স্তব্ধ আর শীতল দিনরাত তাকে ঠিক ততটাই গভীরভাবে মুগ্ধ করে। পৃথিবীর দিনরাতের ছন্দ যেমন জীবনের সঙ্গে সংযুক্ত তেমনি চাঁদের দিনরাতের নির্জনতা, ধীরগতি তাকে জীবন থেকে মুক্ত করে চিরন্তন সত্ত্বার অনুভূতি দেয়।
চাঁদে সময় পৃথিবীর তুলনায় আলাদা মাপকাঠিতে চলে। চাঁদ তার নিজের অক্ষে ঘোরে এবং পৃথিবীর চারপাশে আবর্তিত হয়। আবর্তন আর ঘূর্ণনের সময় প্রায় ২৭.৩ দিন। ফলে পৃথিবীর একই পৃষ্ঠ থেকে সবসময় চাঁদের একটি দিকই দেখা যায়, যাকে বলা হয় ‘টাইডাল লকিং’।
চাঁদের দিনের আলোর শীতলতা পৃথিবীর দিনের মতো গাঢ় বা উজ্জ্বল নয়, ধূসরাভ এক আলো যা তাপের তুলনায় বরং নীরব অনুভূতি এনে দেয়। চাঁদের রাত গভীর, শীতল, নিকষ অন্ধকার, পৃথিবীর রাতের চেয়ে অনেক বেশি দীর্ঘ ও নিস্তব্ধ। পৃথিবীর রাত যেখানে হয় কিছু ঘন্টার জন্য, চাঁদের
রাত হয় প্রায় ১৪ দিনের জন্য।
নন্দিনীকে চাঁদের দীর্ঘ দিন আর রাতের বৈচিত্র্য অভিভূত করে। চাঁদের ধীর সময় তাকে জীবন থেকে মুক্তি দিয়ে শান্তি এনে দেয়। পৃথিবীর সময় জীবনের স্রোতে বাঁধা। চাঁদে চিরন্তন স্তব্ধতা। যেখানে সবকিছুই থেমে আছে মহাজাগতিক মায়ায়। চাঁদের দীর্ঘ রাতের শীতলতা এত গভীর যে তাপমাত্রা প্রায় মাইনাস ১৭৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত নেমে যায়। কোনো বাতাস নেই, নেই তাপমাত্রা কমানোর ব্যবস্থা। সবকিছু স্তব্ধ হয়ে গভীর নির্জনতার মধ্যে নিমজ্জিত। চাঁদের নিস্তব্ধতা ও শীতলতা পরম শান্তি এনে দেয়। যা পৃথিবীতে হয়তো কল্পনাও করা যায় না।
নন্দিনী চাঁদের বৈজ্ঞানিক তথ্যগুলো উপলব্ধি করে নিজেকে মহাজাগতিক বাস্তবতায় আবদ্ধ অনুভব করে। চাঁদের দীর্ঘ রাত আর নিঃসীম স্তব্ধতা তাকে পৃথিবীর কোলাহল থেকে দূরে আধ্যাত্মিক একাকীত্বের আবরণে ঢেকে দিয়েছে। সে হারিয়ে যায় শাশ্বত আকাশের নিচে যেখানে সময় নেই, নেই কোনো কোলাহল। কেবল চাঁদের রহস্যময়
রাত্রি তার জীবনকে নির্জনতা ও শান্ত আবেশে মুছে দেয়। সে চিরকালের জন্য পৃথিবীর ক্ষণস্থায়ী জীবনের ছায়া থেকে দূরে চলে এসেছে। যেখানে সময় থেমে থাকে। জীবন হয়ে ওঠে অবিরাম, মায়াবী অভিনশ্বর অস্তিত্ব।
চাঁদের তীব্র তাপমাত্রা এবং আলো-অন্ধকারের চক্রে মানিয়ে নেওয়া নন্দিনীর জন্য সহজ ছিল না। পৃথিবীর স্বাভাবিক তাপমাত্রার পর চাঁদের তাপমাত্রার চরম বৈচিত্র্য তার শরীর ও মানসিকতার ওপর বিরাট প্রভাব ফেলে। দিনে চাঁদের তাপমাত্রা বেড়ে প্রায় ১২৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত উঠে। রাতে তা নেমে যায় মাইনাস ১৭৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত। প্রায় ৩০০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের তাপমাত্রার তারতম্য ছিল সম্পূর্ণ নতুন এক অভিজ্ঞতা।
চাঁদে দিন ও রাত কাটাতে গিয়ে নন্দিনী উপলব্ধি করে তাপমাত্রার মধ্যে বেঁচে থাকা মানসিক এবং শারীরিকভাবে কতটা চ্যালেঞ্জিং। উচ্চ তাপমাত্রায় শরীর শুষ্ক হয়ে যায়। এরই মাঝে সে খুঁজে পায় নিজের অভ্যন্তরীণ শক্তি। যে শক্তি তাকে নতুন পরিবেশে মানিয়ে নিতে সাহায্য করে। ক্রমে সে
এমন পদ্ধতি রপ্ত করতে শুরু করে যা তাকে বৈচিত্র্যময় পরিবেশে মানিয়ে নিতে সহায়তা করে।
চাঁদের দিনের আলো পৃথিবীর মতো উজ্জ্বল নয়। এটি ধূসর ও কিছুটা রহস্যময়। সূর্যের আলো যখন চাঁদের ওপর পড়ে, তখনো সেই আলো শীতল এবং শুষ্ক থাকে। দিনের ধূসর আলোর মাঝে নন্দিনী নিজের অভ্যন্তরীণ আলোকে অনুভব করে। যে আলো তাকে একান্তে প্রশান্তি এনে দেয়।
ধীরে ধীরে নন্দিনী চাঁদের কঠিন আবহাওয়ায় মানিয়ে নিতে শেখে। পৃথিবীর কোলাহলময় জীবন থেকে দূরে, শীতল, স্তব্ধ, এবং মায়াময় পরিবেশে সে খুঁজে পায় আশ্রয়। নতুন আবাস তাকে শারীরিকভাবে কষ্ট দিলেও মানসিকভাবে আরো দৃঢ় করে তোলে। নন্দিনী এক সময় বুঝতে পারে চাঁদে তার উপস্থিতি কেবল একটি ব্যক্তিগত অভিযান নয় বরং এই শূন্য, শীতল মনূষ্যহীন অঞ্চলে তার গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। চাঁদে নতুন সভ্যতার ভিত্তি স্থাপনের ভাবনা ধীরে ধীরে তার মধ্যে জন্ম নেয়। সে স্বপ্ন দেখতে শুরু করে এমন একটি চাঁদের যেখানে মানবজাতি পৃথিবীর বাইরে
নিজের অস্তিত্বের নতুন অধ্যায় গড়ে তুলবে।
চাঁদে খাদ্য ও পানীয় জলের জন্য নন্দিনী চাঁদের ভূগর্ভস্থ পানি, মাটির মধ্যে লুকায়িত খনিজ উপাদানের সন্ধান করে। কৃষি ব্যবস্থা গড়ে তোলে য
প্রথমবারের মতো সবুজের আভাস দেখতে পায়। অক্সিজেন ও খাদ্য উৎপাদনের জন্য হাইড্রোপনিকস পদ্ধতি ব্যবহার করে বিশেষায়িত উদ্ভিদ চাষ করে। তাপমাত্রা সহনীয় আবাসন প্রযুক্তি গড়া হয় যেখানে দিনের উত্তাপ এবং রাতের শীতলতায় মানুষ সুরক্ষিত থাকে। কৃত্রিম আলোর মাধ্যমে পৃথিবীর দিনের মতো আলোর চক্র তৈরি করে জীবন প্রনালী নান্দনিক, সহনশীল ও শোভনীয় করা হয়।
নতুন সভ্যতার সূচনা হয়। পৃথিবী থেকে লক্ষ যোজন দুরে যুদ্ধহীন শান্তিপূর্ণ জগৎ গড়ে উঠে। অর্পিত দায়িত্ব যথাযথ পালন করতে পেরে আনন্দিত হয় নন্দনী। সে উপলব্ধি করে তার সময় ফুরিয়ে এসেছে। অনন্তলোকে মিশে যাওয়ার মূহুর্তে পৃথিবীতে মহান বার্তাটি প্রেরণ করে নন্দিনী।
‘চাঁদ মনুষ্যের বাসযোগ্য’
0 Comments