জাকির তালুকদার-এর জন্ম ২০ জানুয়ারি ১৯৬৫, নাটোরে। পেশাগত জীবনে চিকিৎসক; স্বাস্থ্য অর্থনীতিতে স্নাতকোত্তর ডিপ্লোমা অর্জন করেছেন। তার প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে- গল্পগ্রন্থ : স্বপ্নযাত্রা কিংবা উদ্বাস্তুপুরাণ (১৯৯৭), বিশ্বাসের আগুন (২০০০), কন্যা ও জলকন্যা (২০০৩), কল্পনা চাকমা ও রাজার সেপাই (২০০৬, দ্বিতীয় সংস্করণ ২০১৪), রাজনৈতিক গল্প : হা-ভাতভূমি (২০০৬), মাতৃহন্তা ও অন্যান্য গল্প (২০০৭), The Uprooted Image (২০০৮), গল্পসমগ্র প্রথম খণ্ড (২০১০), যোজনগন্ধা (২০১২), বাছাই গল্প (২০১৩), গোরস্তানে জ্যোৎস্না (২০১৪)। উপন্যাস : কুরসিনামা (২০০২, পশ্চিমবঙ্গ সংস্করণ ২০১২), হাঁটতে থাকা মানুষের গান (২০০৬), বহিরাগত (২০০৮), মুসলমানমঙ্গল (২০০৯), পিতৃগণ (২০১১), কবি ও কামিনী (২০১২), ছায়াবাস্তব (২০১৩)। প্রবন্ধ : গল্পপাঠ (২০০১), বাংলাসাহিত্যের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন (২০১১)। মুক্তগদ্য : কার্ল মার্কস মানুষটি কেমন ছিলেন (২০১৪)। কিশোর সাহিত্য : চলনবিলের রূপকথা (২০০৪), মায়ের জন্য ভালোবাসা (২০১২)। ছড়া : তিনতিড়ি (১৯৮৯), নাইমামা কানামামা (১৯৯৫)। সম্পাদনা : প্রতিপাঠ : উত্তরআধুনিকতা (২০০২, দ্বিতীয় সংস্করণ ২০০৬), মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের শ্রেষ্ঠ গল্প (২০০৮), নরেন্দ্রনাথ মিত্রের শ্রেষ্ঠ গল্প (২০০৮), সুবোধ ঘোষের শ্রেষ্ঠ গল্প (২০০৭), আবদুশ শাকুরের শ্রেষ্ঠ গল্প (২০০৬), শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের শ্রেষ্ঠ কিশোর গল্প (২০০৬), বাংলাদেশের গল্প (২০১২)। অনুবাদ : আনা হ্যানা জোহ্যানা- মারিয়ান্নি ফ্রেড্রিকসন (২০০৩), হেনরী কিসিঞ্জারের বিচার- ক্রিস্টোফার হিচেন্স (২০০৪), দূর দিগন্তে উঁকি- ভিন্নভাষার গল্প সংকলন (২০১৪)।
অর্জিত পুরস্কার ও সম্মাননার মধ্যে রয়েছে- কথাসাহিত্যে বাংলা একাডেমি পুরস্কার (২০১৪), কাগজ কথাসাহিত্য পুরস্কার (২০০১), মহারানী ভবানী সাহিত্য পদক (২০০৮), বগুড়া লেখক চক্র পুরস্কার (২০০৯), চিহ্ন সম্মাননা, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (২০১০), জেমকন সাহিত্য পুরস্কার (২০১২), আখতারুজ্জামান ইলিয়াস কথাসাহিত্য পুরস্কার (২০১৩), রফিক-উল-ইসলাম স্মৃতি খোঁজ সাহিত্য পুরস্কার (২০১৫, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত)। তবে ২০২৪ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কার ফিরিয়ে দেন।
গল্পচর্চা, গল্পপাঠ, সমকালীন বাংলা গল্পের গতিপ্রকৃতির বিষয়কে উপজীব্য করে বরেণ্য এ গল্পকারের সঙ্গে কথা বলেছে উন্মেষ সাহিত্য সাময়িকী। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন শফিক হাসান—
আপনার গল্প লেখার শুরু কখন, কীভাবে?
জাকির তালুকদার : সেইভাবে দিন-তারিখ দিয়ে তো গল্প লেখার শুরুর কথা বলা সম্ভব নয়। সম্ভবত আমি যখন প্রথম কাগজ-কলমে গল্প লিখেছি, তার অনেক আগে থেকেই মনের মধ্যে লেখা তৈরি হচ্ছিলো। সেই প্রক্রিয়া চলেছে বছরের পর বছর। নির্ঝরের স্বপ্নভঙ্গের মতো হঠাৎ একদিন গল্প ঝরঝর করে খাতার পাতায় ঝরে পড়েনি। অন্তত আমার ক্ষেত্রে। প্রগতিশীল ছাত্র রাজনীতির সাথে যুক্ত ছিলাম ছাত্রজীবনের পুরোটাই। প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম জাতীয় রাজনীতিতে যোগ দেবো সার্বক্ষণিক কর্মী হিসেবে। কিন্তু নব্বই দশকের শুরুতেই আমাদের সামাজিক এবং রাজনৈতিক দর্শন প্রচণ্ড হোঁচট খেয়েছিলো। সেই সময়টাতে যাদেরকে নেতা ও তাত্ত্বিক হিসেবে জানতাম, শ্রদ্ধা করতাম, তাদের দেখলাম কোনো পর্যালোচনার ধার না ধেরে সোজা পিঠটান দিতে। মনে হচ্ছিলো তারা সব পাটের বস্তায় ভরে রাখা সর্ষের তেল। টপ টপ করে বস্তা থেকে ঝরে পড়ছেন বিএনপিতে, আওয়ামী লীগে। কেউ কেউ হয়ে যাচ্ছেন রাজনীতিতে উদাসীন। আমার মনে তখন অসংখ্য প্রশ্ন। কিন্তু উত্তর দেওয়ার কেউ নেই। ফলে রাজনীতিটা আর করা হয়ে উঠলো না।
প্রগতিশীল রাজনীতি করতে গেলে নানা ধরনের পড়াশোনা তখন বাধ্যতামূলক ছিলো। এর বাইরেও আমার পড়ার অভ্যেস ছিলো পেটুক পাঠকের মতো। কিছুটা লেখালেখিও করেছি তখন। তো রাজনীতি যখন করা হলো না, লেখালেখিটাকেই আঁকড়ে ধরলাম পুরোপুরিভাবে। পরে বুঝলাম, আসলে লেখালেখিটাই আমার আসল কাজ। ভালো হোক, মন্দ হোক, এই একটা কাজই আমি পারি। রাজনীতিতে গেলেও টিকতে পারতাম না। কাজেই আগে যেগুলো মনে ও মস্তিষ্কে ক্রিয়াশীল ছিলো, সেসব নেমে আসতে শুরু করলো কাগজে-কলমে। এগুলোকেই বলা যেতে পারে শুরুর সময়ের কথা।
গল্প লেখেন কেন?
জাকির তালুকদার : দেখুন, রাজনৈতিক এবং দার্শনিক হোঁচটে প্রচণ্ড ভাঙা মন নিয়ে আমি গ্রামে চলে গিয়েছিলাম চাকরি করতে। তার আগে আমি কোনোদিন গ্রামে থাকিনি। আর এই গ্রাম এমন গ্রাম, যেখানে নব্বই দশকের শুরুতে সপ্তাহে ছয়দিন বিদ্যুৎবিহীন কাটাতে হতো আমাদের। আগে রাজনীতির কারণে গ্রামে-গঞ্জে গিয়েছি বটে, কিন্তু দীর্ঘস্থায়ী অবস্থান তো ছিলো না। তো সমাজের প্রান্তিক মানুষদের ভালোভাবে জানতে পারলাম এই চাকরির সুবাদে। আমার একটা জিজ্ঞাসা ছিলো। সেটি হচ্ছে, যাদের জীবনে প্রায় কিছুই নাই বলতে গেলে, কোনো আশাবাদ পর্যন্ত নাই, তারা কোন কারণে বেঁচে থাকেন, জীবন টেনে নিয়ে চলেন। আমাদের কাছে মনে হতো এদের জীবনের তো কোনো অর্থ নেই, কোনো অর্থবহতা নেই। এই চাকরিতে এসে আমার ভুলটা ভাঙলো। প্রত্যেকেই তার জীবনকে অর্থবহ বলেই মনে করেন। এবং সেই অর্থবহতার জোগান আসে নানা ধরনের সামাজিক-আধ্যাত্মিক চোরাস্রােত থেকে। সেই অর্থবহতার স্বরূপ খুঁজে বের করাটা তখন আমার প্রধান কাজ হয়ে দাঁড়ালো। আর সেই মানুষদের জীবনকে মনে হলো কবিতা-ছড়া-নাটক-প্রবন্ধ কোনো কিছু দিয়েই পরিষ্কারভাবে তুলে আনা সম্ভব হবে না। এই কাজটি একমাত্র করতে পারে গল্প। অন্তত আমি গল্প ছাড়া অন্য কোনো সাহিত্যমাধ্যমে এই ‘র’ জীবন তুলে আনতে পারবো না। সেই কারণেই গল্প লেখা।
কী ধরনের বিষয়বস্তু নিয়ে গল্প লিখতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন?
জাকির তালুকদার : প্রথম কথা হচ্ছে আমি স্বচ্ছন্দে কোনো গল্প লিখতে পারি না। গল্প লেখা আমার কাছে খুবই কষ্টকর একটি প্রক্রিয়া। প্রতিটি গল্প লিখতে গিয়ে আমি শারীরিকভাবে অসুস্থ আর মানসিকভাবে ক্লান্ত হয়ে পড়ি প্রচণ্ড। অবশ্য লেখা শেষ হলে পুরোটাই আপনাআপনি স্বাভাবিক হয়ে আসে। তাই গল্প না লিখে যখন আর পারা যায় না, একমাত্র তখনই আমি গল্প লিখি।
আর বিষয়বস্তু নিয়ে আমার কোনো বাছবিচার নাই। মানুষের সাথে সম্পর্কিত সবকিছুই আমার গল্পের বিষয় হতে পারে।
পাঠকদের ওপর আপনার গল্পের প্রভাব কেমন?
জাকির তালুকদার : এই প্রশ্নের উত্তর তো আমার পক্ষে দেওয়া সম্ভব নয়। পাঠকদের জিজ্ঞেস করাই ভালো।
গল্প লেখার সার্থকতা খুঁজে পান?
জাকির তালুকদার : পাই। না পেলে এতদিন ধরে লেখালেখি চালিয়ে যেতে পারতাম না।
প্রতিনিয়ত পরিবর্তনশীল সমাজে গল্প পাঠের প্রাসঙ্গিকতা কী?
জাকির তালুকদার : লেখক হিসেবে নয়, এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়া যেতে পারে একজন পাঠকের দৃষ্টিতে। আমি যেহেতু গল্পের পাঠক। যতখানি লেখক তারচেয়ে অনেক বেশি পাঠক। কাজেই উত্তরটা পাঠক হিসেবে দেওয়ার অধিকার আমার আছে। পরিবর্তনশীল সমাজ, দেশ, পৃথিবী, ব্যক্তিমানসের পরিবর্তনের বাহ্যিক এবং অভ্যন্তরীণ স্রোতগুলো আমার জানামতে গল্পেই সবচেয়ে ভালো ফুটে উঠেছে। তাই সব ধরনের পরিবর্তনশীলতার অন্তর্নিহিত বাস্তবতা বুঝতে গেলে আমাকে গল্পের কাছেই যেতে হয়। এখানেই সবচেয়ে বড় প্রাসঙ্গিকতা।
একজন পাঠক আপনার গল্প পড়বে কেন?
জাকির তালুকদার : এই প্রশ্নের উত্তর কেবলমাত্র পাঠকরাই দিতে পারবেন।
বাংলা সাহিত্যে গল্পের যে নতুন ধারা তৈরি হয়েছে, সে প্রেক্ষাপটে আপনার লিখন প্রস্তুতি কী রকম?
জাকির তালুকদার : প্রতিটি সার্থক গল্পই নতুন। কাজেই নতুন ধারা বলে কিছু নাই। আমি সবসময় পৃথিবীর সকল দার্শনিক-নৈতিক-রাজনৈতিক-সামাজিক-অর্থনৈতিক-ঐতিহাসিক ঘটনা এবং চিন্তার সাথে পরিচিত থাকার চেষ্টা করি। কখনো সক্রিয় অংশ নিই, কখনো মনে মনে পর্যালোচনা করি, যাচাই-বাছাই করি। কাজেই লিখন-প্রস্তুতি আমার মধ্যে সবসময়ই ক্রিয়াশীল।
আর খেয়াল করলে দেখবেন, আমি কখনো নির্দিষ্ট ফর্ম এবং বিষয়ের মধ্যে আবদ্ধ থাকি না। আমি কখনো পুনরাবৃত্তি করি না। ধরুন আমি একশোটা গল্প লিখেছি। যখন একশো এক নম্বর গল্পটি লিখতে বসি, তখন আগের লেখাগুলো আমাকে কোনো সাহায্য করতে পারে না। এই নতুন গল্পটির জন্য আমাকে সম্পূর্ণ আলাদা ধরনের ভাষারীতি ও চিন্তার বিন্যাস ব্যবহার করতে হয়। এভাবেই সবসময় নতুনের প্রস্তুতি কাজ করে আমার মধ্যে।গল্পের ভবিষ্যৎ নিয়ে আপনি কতটুকু আশাবাদী?
জাকির তালুকদার : কোনো মাপকাঠি তো নেই। কিন্তু আমি নিরাশ নই।
বিশ্বসাহিত্যে বাংলা গল্পের অবস্থান কোথায়?
জাকির তালুকদার : বাংলা গল্প আমি পড়েছি কালানুক্রম ধরে। লেখক ধরে ধরে। সর্বোচ্চ মনোযোগ দিয়ে পড়েছি। আর পৃথিবীর অন্যান্য ভাষার গল্প পড়েছি বাংলা কিংবা ইংরেজি অনুবাদের মাধ্যমে। অন্য কোনো ভাষা আমি তেমন জানি না। সেই পাঠ-অভিজ্ঞতা থেকে খুব জোরের সাথেই বলতে পারি, বাংলাভাষায় যত ভালো গল্প লেখা হয়েছে তা পৃথিবীর অন্য ভাষার গল্পের তুলনায় হতাশ হবার মতো নয়। আর তুলনার কথা বলিই বা কেন? একেক ভাষার মানুষের বাস্তবতা, চিন্তা, দার্শনিকতা- সবকিছই আলাদা আলাদা। কাজেই তুলনা করতে যাওয়াটাও ভুল বলেই আমার মনে হয়।
আপনার গল্প লেখার প্রেরণা কী?
জাকির তালুকদার : আমি সচেতনভাবে কোনো প্রেরণার কথা মনে করতে পারছি না। গল্প না লিখে থাকতে পারি না, তাই লিখি। অন্য কোনো কাজ পারি না, গল্পটাই একটু-অধটু লিখতে পারি, সেই কারণেই লিখি।
আপনার প্রথম গল্পগ্রন্থ প্রকাশের নেপথ্য গল্প কী?
জাকির তালুকদার : সেই নেপথ্য কাহিনী আপনাদের কাগজে আগের কোনো একটি সংখ্যায় লিখেছি। সেটা তুলে দিতে পারেন। সংক্ষেপে সেটা এই রকম। আমার প্রথম গল্পের বই ‘স্বপ্নযাত্রা কিংবা উদ্বাস্তুপুরাণ’। ১৯৯৮ সালের জানুয়ারি ছিলো প্রকাশকাল। প্রকাশক ‘নিসর্গ’ পত্রিকার পক্ষ থেকে সরকার আশরাফ। প্রথম বই করার খরচ অন্য সব ক্ষেত্রের মতোই। অর্থাৎ লেখকের নিজস্ব অর্থায়ন। তবে খরচ অনেক কম হয়েছিলো সরকার আশরাফের পরিশ্রম এবং সাশ্রয়ী কর্মকাণ্ডের জন্য। তখন ‘নিসর্গ’ বেরুত বগুড়া থেকে। ফলে ‘স্বপ্নযাত্রা কিংবা উদ্বাস্তুপুরাণ’ও প্রকাশিত হলো বগুড়া থেকে। প্রচ্ছদ নেওয়া হয়েছিল নীরদ মজুমদারের একটি ছবি থেকে। আমি তখন চাকরিসূত্রে বিভিন্ন গণ্ডগ্রামে অবস্থান করছি। কাজেই প্রকাশনার সকল কাজই করতে হয়েছিলো প্রকাশককে। প্রুফ দেখা, পেস্টিং করা, প্লেট তৈরি, ছাপা, বাঁধাইসহ আয়াসসাধ্য কাজগুলি একাই করেছিলেন তিনি। এই বই প্রকাশের পরপরই সরকার আশরাফের সাথে আমার সম্পর্কের অবনতি হয় (তবে তা এই বইকে কেন্দ্র করে নয়)। ফলে তিনি এই বইটি নিয়ে প্রকাশ-পরবর্তী আর কোনো সহযোগিতা করেননি। সেই কাজগুলি প্রধানত করেছিলেন গৌরাঙ্গ মণ্ডল এবং রহমান হেনরী। এই বইটি প্রকাশের শুরু থেকেই আগ্রহী ছিলেন এই দুইজন। শুধু বই প্রকাশ নয়, বরং এই বই প্রকাশের পরে দুই বাংলায় বিভিন্ন জায়গায় পৌঁছে দেওয়া, আলোচনা করানো, গল্পগুলির অগতানুগতিকতা তুলে ধরার মতো কাজগুলি তারা করেছিলেন অত্যন্ত আন্তরিকতার সাথে। তাদের কারণেই অনেক পত্রপত্রিকায় আলোচিত হয় বইটি। আলোচনা করেছিলেন বড় লেখক এবং সমালোচকরা। তার চাইতেও সৌভাগ্যের বিষয় হচ্ছে এই গ্রন্থের গল্পগুলি যে গতানুগতিক নয়, এবং এই লেখক যে সাহিত্যের জগতে টিকে থাকার জন্যই এসেছে, তা অন্তত মুখ ফুটে প্রকাশ করেছিলেন আমাদের বোদ্ধামহলের অনেকেই। বইয়ের দু’টি গল্প ‘সোলেমান পয়গম্বরের দেয়াল’ এবং ‘স্বপ্নযাত্রা কিংবা উদ্বাস্তুপুরাণ’-এ ব্যবহৃত হয়েছিল মুসলিম মিথ। অনেকেই মুখে এবং লিখে জানালেন, বাংলাভাষায় মুসলিম মিথকে ব্যবহার করে পূর্ণাঙ্গ গল্প রচনার এটাই প্রথম সার্থক প্রচেষ্টা। সেই সময় সর্বাধিক প্রচারিত কাগজ ছিল ‘ভোরের কাগজ’। সেই পত্রিকায় বছর শেষে সাহিত্যের সালতামামি লিখতে গিয়ে সুশান্ত মজুমদার বইটির প্রসঙ্গে দু’জন সম্ভাবনাময় লেখকের আগমনের কথা উল্লেখ করেছিলেন। একজন এই গ্রন্থের লেখক। অপরজনও আমার মতোই মফস্বলবাসী, আকমল হোসেন নিপু। সে বছরের বইমেলায় বিভিন্ন স্টলে বইটি দেওয়া হয়েছিলো। কেউ কি আর সহজে রাখতে চায়! আজিজ মার্কেটসহ ঢাকার বিভিন্ন স্টলে ঘুরে ঘুরে বইটি রাখতে রাজি করানোর এবং পৌঁছে দেওয়ার কষ্টকর কাজটি করেছিলো মারুফ রেজা বায়রন। দেশের বিভিন্ন শহরেও পাঠানো হয়েছিলো। সেগুলি বিক্রি হয়েছে কিনা জানি না। তবে আমি এক টাকাও পাইনি।
আপনার প্রিয় গল্পকার কারা, কেন প্রিয়?
জাকির তালুকদার : আমার প্রিয় গল্পকার অনেক। তবে সব প্রিয় গল্পকারের সব গল্প ভালো লাগেনি। লাগার কথাও নয়। তারপরেও সংখ্যাটি অনেক বড়। অতগুলি নাম বলার কোনো অবকাশ এই পরিসরে নেই। আর কেন তারা প্রিয়, সে কথা বলতে গেলে এই প্রশ্নকে নির্ভর করে পুরো একটা অভিসন্দর্ভের বই লেখা হয়ে যাবে।
0 Comments