Advertisement

উন্মেষ

তিনটি কবিতা | রূপক বিধৌত সাধু

rupok_weeklyunmesh.com

আবার কখনো যদি

আবার কখনো যদি আমাদের দেখা
হয় কোনো এক রেলস্টেশনের ধারে,
হাজারো লোকের ভিড়ে তুমি কি আমায়
চিনতে পারবে সেই লোক-লোকারণ্যে?

মধ্য-বিরতিতে পপকর্ণ হাতে নিয়ে
ছুটছি যখন এক প্লাটফর্ম হতে
অন্য প্লাটফর্মে, আমার ব্যস্ততা দেখে
কী উচ্ছ্বাসে মিটিমিটি হাসছো তখন!
থমকে দাঁড়াই আমি, ভুল দেখছি কি?
কোথা হতে নেমে এলো আকাশের চাঁদ,
খুঁজছি যারে হাজার বিভাবরী ধরে
যারে ভাবি অবিরত শয়নে স্বপনে।
বাকরুদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলাম, তুমি
নিজেই এগিয়ে এসে হাতটা ধরলে;
তোমার সজল চোখে কী জানি মুগ্ধতা
আমায় আচ্ছন্ন করে দাবিয়ে রাখলো।

ইচ্ছে গাছ

একটা গাছ লাগিয়েছিলাম গোপনে
আমার বুকের একেবারে মাঝখানে;
যেখানে হৃদয় থাকে, যেখানে কষ্টেরা
জমে; ডুকরে কাঁদে মানুষ নিষ্পেষণে-
সেটা এক ইচ্ছে গাছ, স্বপ্ন তার নাম;
সে গাছে আমি প্রত্যেহ জল ছিটাতাম,
যত্ন নিতাম; যেভাবে মালীরা সতত
ফুলের বাগান পরিচর্যায় আগত।

পরিপুষ্ট হয়ে উঠেছিলো ক্রমশই,
আমি তৃপ্ত হাসোজ্জ্বল মুখে বসে রই।
পাখি উড়ে এসে বসে সে গাছের ডালে,
কিচিরমিচির ডাকে সুর-ছন্দ-তালে।
আমার দুঃখরা সব দিয়েছিলো ছুট,
ভাবতে পেরেছিলাম কি সবই ঝুট?
সহসা একটা ঝড় দৈত্য সম এসে
চুরমার করে দেবে সব অনায়াসে?
গাছের বিরহে আজ করি আমি শোক,
অদৃষ্টের প্রহসনে নিত্যই দুর্ভোগ!

কাটে যদি অন্ধকার

তোমাদের শহরটা রোদে খাঁ খাঁ করে।
পথে-ঘাটে ভিড় নেই। সকলেই ঘরে
বন্দি আছে। কারো নেই কোনো কাজ-বাজ।
করোনার ভয়ে বিরানভূমি সমাজ।
প্রতিদিনই আসছে মৃত্যুর খবর।
আতঙ্কিত সকলেই কাঁপে থরথর।
এই বুঝি দেখা দিলো মৃত্যু-যমদূত,
দরুদ-কালাম পড়ে মরতে প্রস্তুত।
আকাশের হাতে আপাতত সমাধান?
সভ্যতা মুমূর্ষু? বিজ্ঞানের অপমান?

কী যে হবে এই ভেবে দিনগুলো কাটে,
ছিলো যতো স্বপ্ন-আশা মারা যাবে মাঠে?
পাবো না আর কি নতুন সূর্যের দেখা?
প্রকৃতির হাতে তবে মৃত্যুই কি লেখা?
নানা কথা ভেবে বুক ভারী হয়ে যায়,
প্রকৃতির কাছে আজো কতো অসহায়
মানবজাতি! ভাবলে কাঁটা দিয়ে উঠে
শরীর। ধুলোয় পড়ে যাই মাথা লুটে।

কাটে যদি অন্ধকার কোনো একদিন,
পৃথিবী হয়তো হয়ে উঠবে রঙিন।
পাখিরা ডাকবে কিচিরমিচির করে,
নানান রঙের ফুল ফুটবে প্রান্তরে।
খাবার থাকবে মানুষের ঘরে ঘরে,
খোয়াব দেখবে ভালোমন্দ খেয়ে-পরে।
ধনী-গরীবের থাকবে না ভেদাভেদ,
ধর্মীয় মৌলবাদেরও হবে উচ্ছেদ।

Post a Comment

0 Comments