আহসান হাবিবের তিনটি কবিতা

সুখ

বহুকাল একা থেকে দেখলাম
এখানে সুখ নেই
বহুকাল সংসারে থেকেও দেখেছি
সেখানেও কোন সুখ নেই

বহু মানুষের সংগে মিশে
পান করে
নেচে
দেখলাম এইসবেও সুখ নেই

চিরহরিৎ বাগানের শোভা
পাখির গান
নদীর ঢেউ, রংধনু দেখে
দেখেছি চিত্ত পুলকে নেচেছে
তারপর মিলিয়ে গেছে দিগন্তে..

সুখ বলে কিছু পাইনি এইসবে

কবিতা লিখে, গান গেয়ে
গদ্য লিখে
বইয়ের পর বই পড়ে
দেখেছি আনন্দ দিয়েছে এইসব
কিন্তু সুখের লেশও পাইনি

নারীর সংগে বাস করে
আন্তঃভ্রমণে লিপ্ত থেকেও
দেখেছি কোন সুখ নেই এখানে
সন্তানের নরম গালে চুমু খেয়ে
সুখের আবেশে মুদেছিলাম চোখ
সে ক্ষণকাল
তারপর তারা নিজেরাই ভুলে গেছে..

পেয়ে যা হারিয়ে ফেলেছি
সেই বেদনায় মুষড়ে পড়েছি
অপেক্ষা করেছি দিনের পর দিন
ভেবেছি যদি আবার ফিরে পাই
এই বোধ সুখের মায়া ছড়িয়েছে

কিন্তু কিছুই ফিরে আসেনি!

এখন কোনকিছু না পাওয়ার বেদনা
আমাকে সুখ দেয়
তখন একলা থাকা মুখর হয়ে বাজে

হাহাকার এবং সুখ এখানে দীর্ঘমেয়াদি
গলা জড়াজড়ি করে ঘুমায়..

গভীর গোপন

১
যদি বল বাসনা কি রেখে যাচ্ছি
অপূরিত
বলবো 'সে এক গভীর গোপন'

যদি বল এতো দীর্ঘ বেদনা নিয়ে
কেন এই যাপন
বলবো 'সে এক গভীর গোপন'

২
যারা যারা এসেছিল
তারা সবাই ফিরে গেছে
একে একে

আমাকে একলা ফেলে

আমিও প্রায় প্রস্থানোদ্যত
অপরাহ্ণের এই আলোয়
যদি বল কি এমন সুর চলেছে বেজে
কোন রাগিণীতে
বলবো 'সে এক গভীর গোপন'

৩
স্মৃতি ফলকে লিখে রেখো: লোকটি
কি যেন বলতে চেয়েছিল
বলেনি
শুধু বলেছিল 'আমি রেখে যাচ্ছি
একটি দীর্ঘশ্বাস, একটি না বলা বাণী,
একটি গভীর গোপন বাসনা'

সামান্য চাওয়া

১
খুব বেশি কিছু চায়নি
প্রিয় রমণী
সামান্য এক পেয়ালা ভদকা

এই পুরুষ এতেই তৃপ্ত

রমণ শুধু পাখিদের হোক
বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে গেলে
এখানে নেমে আসুক ঘোর অন্ধকার..

২
অলকেশ, আমার প্রিয় কবি
বন্ধুও
বলেছিল 'সন্ধ্যায় তৈরী থাকিস
নিমেরফ সংগে থাকবে'

তড়িঘড়ি করে কৃষি মার্কেট ঘুরে ঘুরে
সুদৃশ্য গ্লাস কিনে ধুয়ে মুছে রাখি
পাভলভ জীবন্ত হয়ে ওঠে জিহ্বায়

এখানে প্রতি সন্ধ্যায় বৃষ্টি নামে
অলকেশ আর আসে না..

৩
যদি বল 'কি নিয়ে থাকি সারাদিন'
বলবো 'সে এক অধরামাধুরী'

বুঝলে তুমি সে হয়তো কোন এক পথের ফুল
ছুঁড়ে দিলে করুণা

অথচ 'অধরামাধুরী' কোন ফুল নয়
উষ্ণজলের ট্রেডনেইম
এখানে জড়াজড়ি করে থাকে
ধ্বনি, শ্রুতি এবং রঙ

ধরতে গেলেই তারা পিছলে যায়
আমি তাই সারাদিন তাদের পিছে পিছে ছুটি...