বাইরে বৃষ্টি, ঘরে কারেন্ট নেই। কবির স্ত্রীর সঙ্গে অন্য এক ভাবীর মোবাইল ফোনে কথা হচ্ছে। কবির স্ত্রী অন্য ভাবিকে জিজ্ঞেস করছেন, ভাবি আজ কি রান্না করবেন?
ফোনেই অন্য ভাবীর জবাব এল, বৃষ্টির রাতে আর কি করব, ভাবছি খিচুড়ি রেঁধে ফেলব।
কবির স্ত্রী জানতে চাইলেন, সঙ্গে কি করবেন, গরুর মাংস? এর পরেই শুরু হয়ে গেল দুজনের মাঝে কথা!
না ভাবী, আপনার ভাইয়ের গরুর মাংসে অ্যালার্জি আছে। ঘরে একটা রাজহাঁস আছে, ওটাই ভুনা করব।
হাঁসের গন্ধ আমার একেবারেই ভালো লাগে না।
আমি আপনাকে রাজহাঁস ভুনার রেসিপি দেব, আপনি কোন গন্ধই পাবেন না। রাজহাঁসের মাংস একেবারেই অন্যরকম। আপনার ভাই খুব পছন্দ করে খায়।
আমার ঘরে খিচুড়ি রান্নার উপায় নেই, তিনি তো আবার কবি, সারাক্ষণই পোলাও খেতে চান।
নিজের স্ত্রীর মুখে পোলাও – এর কথা শুনে পাশে থাকা কবির মুখ অন্ধকারেও উজ্জ্বল হয়ে উঠে, যাক আজ রাতে তাহলে পোলাও হবে।
এই বৃষ্টির রাতে আপনি এত ঝামেলা করবেন, মোবাইল ফোনে অন্য ভাবীর প্রশ্ন।
ঝামেলা কিসের! কবি পোলাও পছন্দ করে। সঙ্গে ইলিশের ঝোল রেঁধে দেব।
পোলাও এর সঙ্গে ইলিশের ঝোল?
ইলিশের ঝোল ওর খুব প্রিয়, সঙ্গে পটল ভেজে দেব, আর দেশি আলু চিকন করে কেটে মচমচে ভাজি।
ভাবী এই রাতে আপনি এত কিছু করবেন, আমি তো শুধু রাজহাঁস ভুনা করব।
বুঝেনই তো, তিনি আবার কবি, একটু ভালো খেতে খুব পছন্দ করে। পোলাওয়ের সঙ্গে ওর আরেকটা জিনিস খুব প্রিয়, আপনি শুনলে হাসবেন।
কি ভাবী?
আগে বলেন, কাউকে বলতে পারবেন না।
না ভাবী, এই কথা দিলাম, কাউকে বলব না।
পোলাওয়ের সঙ্গে পাতলা ডাল আর খুব ঝাল করে দেশি চিংড়ির ভর্তা!
এই রাতে আপনি চিংড়িও ভর্তা করবেন?
চিংড়ি ভর্তা করতে আমার দুই মিনিট লাগবে!
এখন কবির ভীষণ অবস্থা, অন্ধকারেও তার চোখে জ্যোৎস্না চিলিক মারে। আজ আর কবিতা না, নিজের স্ত্রীকে নিয়েই তিনি গান লিখবেন। মনে মনে কথা খুঁজতে থাকেন, কি লেখা যায়! অনেক বড় বড় কবিদের জীবনই গেছে আপন স্ত্রীদের অবহেলায়। কেউ না কি দুঃখে আবার রিক্সা থেকেও লাফ দিয়েছেন। নিজের স্ত্রী ভাগ্যে কবির চোখে পানি এসে গেল বলে! তিনি ঠিক করলেন তার স্ত্রীর মোবাইল ফোনে কথা শেষ হলেই তার হাত ধরে একশ বেলির শুভেচ্ছায় নিজের ভালোবাসা জানাবেন, সঙ্গে বলবেন একশ তারার স্বপ্নের কথা, নিজের স্ত্রীকে ভাষায় ভাষায় ভাসিয়ে দেবেন ভালোবাসায়।
এদিকে ফোনে দুজনের মাঝে কথা চলছেই। কবির স্ত্রী এত কিছু রান্না করবেন শুনে, অন্য ভাবীর রাজহাঁসের সঙ্গে দেশি সরপুঁটি মাছের ভাজা জুটে গেছে। যেহেতু রাঁধবেনই, রাতে আর কিছু করার নেই, বাচ্চাদের স্কুল বন্ধ, তাই খাসীর মাংসও চলে এসেছে, ওর রেজালা হবে। পাল্লা দিয়ে কবির বাড়িতে ঢুকল কয়েকটা দেশি মোরগ, কোর্মা হবে। এর মধ্যেই অন্য বাড়িতে নদীর দেশি রুই সাঁতরে চলে এল, দোপেয়াজা হবে। কবির বাড়িতে গাছ থেকে টুপ করে পড়ল ঝুনা নারকেল, চিংড়ির মালাইকারির জন্য। পাল্লা দিয়ে দুটো ঘরেই আইটেম ঢুকছে, অথচ চোর যেন আসতে না পারে তার জন্য দুটো বাড়িরই দরজা বন্ধ, বৃষ্টির জন্য আজ জানালাও বন্ধ, দুজনের ঘরেই আইটেম ঢুকছে মোবাইল ফোনে। যাহোক, গরু, মোষ, বাইসন ... ঘরে ঢোকার আগেই মোবাইল ফোনের কথা বন্ধ হল। দুজনেই ফোন রাখলেন, রান্না ঘরে ঢুকবেন বলে।
ফোনে কথা শেষ হওয়া মাত্র কবি উঠে নিজের স্ত্রীর হাত চেপে ধরে বললেন, তুমি আমার ভালোবাসা, নিত্য প্রেমের আশা, ...
বিরক্ত হয়ে কবির স্ত্রী জিজ্ঞেস করলেন, তোমার আবার কি হল? এসব ঢং আমার একেবারেই সহ্য হয় না।
কবি আমতা আমতা করে বললেন, এত কষ্ট করে পোলাও রাঁধবে, ইলিশ রাঁধবে ...
মুখ ঝামটা দিয়ে কবির স্ত্রী বললেন, দেখনি, আজ বুয়া আসেনি, রাতে কিছু হবে না, দুপুরের তেলাপিয়া আছে ...
তাহলে যে ভাবীকে বললে, পোলাও ...
ভাবীদের দিকে এত কান কেন? তোমার স্বভাব দেখি জীবনেও ভালো হবে না...
এবার কবি আর কিছু বলতে পারেন না। হঠাৎ মোবাইল ফোনের ওপাশের ভাবী না, ভাইয়ের জন্য কবির মনের মধ্যে একটা কষ্ট দানা বাঁধতে থাকে। একটু আগেই কবির স্বপ্নের আকাশে যে তারাগুলো ফুটতে শুরু করেছিল, ওগুলো টুপটুপ করে ঝড়ে পড়তে থাকে বৃষ্টি ফোটার সঙ্গে! নিজের স্ত্রীর কাছে কবিরা হয়ত সব সময়ই উপেক্ষিত থাকেন। একটি দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে কবি দুটো বেলি ফুলের ... কিন্তু এত বড় ছন্দপতনের পর আর কিছুতেই ছন্দ মিলতে চাইছে না!
1 Comments
মজার গল্প। লেখককে ধন্যবাদ।
ReplyDelete