Advertisement

উন্মেষ

বুঁদ হয়ে জীবন কাটিয়েছি লেখাতেই, অনেকেই এজন্য অপদার্থ বলত

nure jannat unmesh
অনন্যা সাহিত্য পুরস্কার হাতে নূরে জান্নাত
 

নূরে জান্নাত, জন্ম ও বেড়ে ওঠা সিরাজগঞ্জের ধীতপুর কানু গ্রামে। সমানতালে লিখে চলেছেন কবিতা ও গল্প। তার প্রথম বই 'পদ্ম পাতায় প্রেম' (গল্প)। এছাড়াও লাল শাড়ি (গল্প), নির্বাসির সুখ (কাব্য) ও ঈশ্বর বহুদূর (গল্প) তার উল্লেখযোগ্য বই।

'পথেরও পথ নেই' ছোটগল্প সংকলনের জন্য পেয়েছেন অনন্যা সাহিত্য পুরস্কার-১৪৩১। পুরস্কার প্রাপ্তি, লেখালেখির গল্প নিয়ে কথা বলেছেন উন্মেষ সাহিত্য সাময়িকীর সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সাজেদুর আবেদীন শান্ত-

কেমন আছেন? অন্যান্য সাহিত্য পুরস্কার-১৪৩১ পেলেন,  অভিনন্দন আপনাকে-
নূরে জান্নাত: ধন্যবাদ। আলহামদুলিল্লাহ ভাল আছি।

পুরস্কার পাওয়ার পর অনুভূতি জানতে চাই?
নূরে জান্নাত: অনন্যা সাহিত্য পুরস্কার আমার লেখক জীবনে প্রথম বড় স্বীকৃতি ও প্রাপ্তি। পুরস্কার পেয়ে ভীষণ ভীষণ ভালো লাগছে। বুঁদ হয়ে জীবন কাটিয়েছি লেখাতেই, অনেকেই এজন্য অপদার্থ বলত। এই পুরস্কার পবার পর সবাই প্রশংসা করছে।

পুরস্কার প্রাপ্তি কি আপনার দায়বদ্ধতা বাড়িয়ে দিলো?
নূরে জান্নাত: পুরস্কার প্রাপ্তির আগেও আমি লেখার কাছে দায়বদ্ধ করেছিলাম জীবনকে। এখন জীবনের কাছে লেখার দায়বদ্ধতা বেড়েছে বলে মনে করছি।

লেখালেখির শুরু গল্প জানতে চাই—
নূরে জান্নাত: লেখালেখি শুরু হয়েছিল বাচ্চাবেলা থেকে। আমার মা ছিলেন অসম্ভব শিক্ষানুরাগী নারী, শৈল্পিক মনোভাবের। ছোটবেলা দেখতাম আমার বোন লিখতেন, আর মা উৎসাহ দিতেন। বোনের অনেক বই প্রকাশিত হয়। ক্রেস্ট, মেডেল, সম্মাননা পায়। এসব দেখে মনে হতো ইস, যদি আমি লিখতে পারতাম। একদিন বাড়ির পাশের ছোট্ট নদীর উপর হেলে পড়া বসা গাছের উপর বসে গালে হাত দিয়ে চিন্তা করছিলাম আমি লিখব। স্বচ্ছ জলের নীচে মাছেদের ছুটোছুটি দেখতে দেখতে এমন একটা অখাদ্য লেখা লিখি- ওটা লেখা হয়েছিল না তবুও আমি ভাবতাম লেখা। লেখাটি এমন ছিল-

‘ধানের ক্ষেতে সারস পাখি মস্ত বড়ো ঠোঁট
ঠোঁট দিয়ে মাছ ধরে খটর খটর খোট
পাখিটি খুব ভাল
দেখতে অনেক কালো
পাখিটি খুব ভালু
খায় শুধু আলু
পাখিটি খুব ভালু
সে আমার খালু
পাখিটি খুব ভাল
রাতের বেলা দেয় শুধু ঝিকিমিকি আলো;

হাহাহাহ (অট্টহাসি) এটিই ছিল প্রথম লেখার শুরু। আমার বড় ভাই খুব মেরেছিল ঐদিন। যেদিন বুঝেছি আমিও আমার বোনের মত লেখক হতে চাই। আমার হাতে থাকা খাতা কলম নদীতে ছুড়ে দিয়েছিল, আমি সেদিন খুব কেঁদেছিলাম। আমাদের নিম্নবিত্ত সমাজ, পরিবার, প্রতিবেশি, পরিবেশ ও মুরুব্বিরা লেখালেখিকে অযথা সময় নষ্ট এবং অকর্মা বা অপদার্থদের কাজ হিসেবেই ধরে নিয়েছিল।

প্রথম বই প্রকাশের অনুভুতি কেমন ছিলো?
নূরে জান্নাত: প্রথম বই প্রকাশের অনুভূতি অসম্ভব যন্ত্রণার। প্রকাশের পর তা স্থবির ছিল। ২০১৫ সালে ‘ইচ্ছে ডানা’ নামে একটি ভাঁজপত্র সিরাজগঞ্জে ইলিউট ব্রিজের উত্তর পশ্চিম পাশের সুজন ভাইয়ের কম্পিউটারের দোকান থেক প্রকাশ করি। তখন কালার প্রিন্ট ১০ টাকা করে ছিল, আমি অনেকগুলো প্রিন্ট করায় ৫ টাকা করে নিয়েছিলেন। ভাঁজপত্রটি বিভিন্ন স্কুল-কলেজ বিক্রি করতাম ঘুরে ঘুরে। সিরাজগঞ্জের ভাসানী কলেজে যাওয়ার পর প্রিন্সিপাল স্যার ক্লাসে ক্লাসে ভাঁজপত্রের বিক্রির বিজ্ঞপ্তি এবং আমি একজন লেখক এটা প্রচারে অনুমতি দেননি। অইদিন আমার জ্বর ছিল। ভাসানী কলেজ থেকে হাঁটা শুরু করে চৌরাস্তা পর্যন্ত আমি রাস্তা ঘাট কিছু চিনতে পারিনি। নিজের ঠিকানা ভুলে গিয়েছিলাম। কোনদিকে যাব, বাড়ি কোনদিকে? কিভাবে যাব, এই ভয় ঘিরে ধরেছিল। তখন আমার কাছে কোনো ফোন ছিলনা যে বাড়িতে যোগাযোগ করব। হাঁটতে হাঁটতে এক দুজনকে জিজ্ঞেস করি চৌরাস্তা কোন দিকে। তারপর চৌরাস্তায় আসার পর রাস্তা চিনি। ভাঁজপত্র বিক্রির টাকা, টিউশনির টাকা, টিফিনের পয়সা, মাঝে মাঝে ব্র‍্যাক এবং সার্পের এনজিওর পথনাটক টিমে পথনাটক করার পর পাওয়া পারিশ্রমিক মাটির ভাড়ে জমিয়েছি বই প্রকাশের ইচ্ছাতে।

২০২০ সালে যখন প্রথম বই আনার চেষ্টা করি গুনে দেখি বেশ কিছু টাকা বাকি। কিভাবে বই প্রকাশ করতে হয় তাও জানি না। কোনোমতে একটা প্রকাশনের সাথে যোগাযোগ করি। আমার কলেজের প্রিন্সিপাল মিজানুর রহমান স্যার, শামিমা ম্যাম, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক কামরুল হাসান মুহাম্মাদ স্যার, সেবা মুক্ত স্কাউট গ্রুপের এম এম কামরুল হাসান স্যার উনাদের বলি একটা বই প্রকাশ করতে চাই পুরো টাকা জমিয়ে উঠতে পারিনি, আমাকে সাহায্য করতে হবে। এ ব্যপারে উনারা এগিয়ে আসেন। বই প্রকাশের আগে উদ্দাম আনন্দ অপেক্ষা আমাকে ডুবিয়ে রেখেছিল, যেদিন মেলায় বই এলো আমি বই ছুঁয়ে কেমন যেন নিস্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলাম।

কোন লেখকের গল্প আপনার বেশি ভালো লাগে? কেনো লাগে?
নূরে জান্নাত: যেগুলো পড়েছিলাম আগে কিছুই মনে নেই। খুব ভুলোমনা আমি। তাই বলতে পারছি না। এই মুহূর্তে কিছুই নেই মগজ, মনের দর্পনে।

কবিতা ও গল্প সমানতালে লিখে চলছেন? কোনটাতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন? কেনো করেন?
নূরে জান্নাত: লেখা মানেই স্বাচ্ছন্দ্য। আমার ক্ষেত্রে হয় কি লেখারা নিজে থেকে আসে, যতক্ষণ আমি লিখে শেষ করতে না পারি হোক গল্প, হোক কবিতা, উপন্যাস,  কলাম, প্রবন্ধ, ভ্রমণকাহিনী যেটিই আসুক লিখে ফেলতে পারলেই শান্তি লাগে। তবে গল্পরা বেশি আসে।

এবারের বইমেলায় কি বই আসছে?
নূরে জান্নাত: পান্ডুলিপি এক দুই জায়গায় জমা দিয়েছি। কয়েকটা প্রকাশন চালছে। ভাল মানের প্রসিদ্ধ প্রকাশন ছাড়া এখন আর বই প্রকাশে অত অগ্রসর হতে ভাল লাগে না। তাই ভাবনায় আছি বই হবে কি হবে না। ভাল কোনো প্রকাশন বই প্রকাশের সুযোগ দিলে বা পান্ডুলিপি চাইলে অবশ্যই বই হবে।

Post a Comment

0 Comments