বঙ্গ রাখাল তরুণ কবি ও প্রাবন্ধিক। গবেষণার বিষয় মুক্তিযুদ্ধ ও লোকসাহিত্য। বাল্যকাল থেকেই মায়ের কাছে শুনে শুনে সংগ্রহ করেছেন গ্রামের প্রবাদ-প্রবচন। স্কুলজীবনে এসে নাটক রচনা ও গ্রাম্য মঞ্চে অভিনয় করেছেন। সম্পাদনা করেছেন নিহারণ, শঙ্খধ্বনি, বঙ্গস্বর, সাঁইজি নামের ডজনখানেক পত্রিকা।
কাজ করেছেন শব্দকুঠির নির্বাহী সম্পাদক হিসেবে। তিনি দুই বাংলার প্রতিনিধি স্থানীয় বিভিন্ন দৈনিক, সাপ্তাহিক পত্র-পত্রিকা কিংবা সংকলনে লেখালেখি করে চলেছেন। রাখাল গভীর এক জীবনবোধের দিকে হেঁটে চলেছেন নির্মোহ সন্ন্যাসীর মত। তার কবিতা কিংবা প্রবন্ধ ইতিমধ্যেই পাঠক মহলে সমাদৃত হয়েছে।
বইমেলা ও লেখালেখি নিয়ে বঙ্গ রাখাল কথা বলেছেন উন্মেষ সাহিত্য সাময়িকীর সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সাজেদুর আবেদীন শান্ত-
পাঠকদের জন্য বইমেলায় আপনার কি কি বই থাকছে?
বঙ্গ রাখাল: আমার অমর একুশে বইমেলা-২০২৩ এ এসেছে ‘খেয়ালী বাউল পাগলা কানাই ও তাঁর তত্ত্বদর্শন’। এটি একটা সম্পাদনা গ্রন্থ। বইটি প্রকাশ করেছে অনুপ্রাণন প্রকাশন। অন্য একটা প্রবন্ধের বই ‘বিপ্লবী লীলা নাগ ও অন্যান্য প্রসঙ্গ’ আসার কথা রয়েছে। আর অন্যান্য বারের বইগুলোও মেলাতে থাকছে। যেমন: সংস্কৃতির দিকে ফেরা (প্রতিকথা), লোক মানুষের গান ও আত্ম অন্বেষণ (অনুপ্রাণন), মানবতাবাদী লালন জীবন অন্বেষণ (বলাকা), হাওয়াই ডাঙ্গার ট্রেন (বলাকা), মনীষা বীক্ষণ ও অন্যান্য (অমরাবতী), অগ্রন্থিত রফিক আজাদ (জেব্রাক্রসিং), লণ্ঠনের গ্রাম (অনুপ্রাণন), যৈবতী কন্যা ইশকুলে (টাঙ্গন), কবিতার করতলে (অনুপ্রাণন), অন্ধ যাজক (লেখমালা), ছোটবোয়ালিয়া-জয়ন্তীনগর-বসন্তপুর গণহত্যা (গণহত্যা জাদুঘর) ও কবিতায় ঘর-বসতি (কারুবাক)।
বইমেলায় কি গিয়েছেন? বইমেলার পরিবেশ কেমন লাগছে?
বঙ্গ রাখাল: হ্যাঁ। এ পর্যন্ত তিন-চার বার যাওয়া হয়েছে। তবে মেলার পরিবেশ আগের চেয়ে আমার কাছে একটু গোছালো মনে হয়েছে। তবে লিটল ম্যাগাজিন এবং শিশু চত্বরের প্রতি এবারও অবিচার করা হয়েছে। লিটল ম্যাগাজিনের ব্যানার নিয়েও এবার বাংলা একাডেমি নানা বাহানা করেছে অবশেষে নিজেদের ব্যানার নিজেদের তৈরি করে নিতে হয়েছে। বইয়ের মোড়ক উন্মোচন মঞ্চের সামনে লিটল ম্যাগাজিনের স্থান নির্বাচন করা হয়েছে। এখানে যে কারণে সারাক্ষণ মাইকের শব্দ লেগেই আছে। তবুও এবারের মেলা অন্যবারের চেয়ে গোছানো মনে হচ্ছে ।
বইমেলা থেকে কি ধরনের বই সংগ্রহ করলেন এবার?
বঙ্গ রাখাল: কবিতা-গল্প-প্রবন্ধ-লোকসাহিত্য। আমার সব সময় প্রবন্ধ এবং কবিতার বই’ই বেশি সংগ্রহ করা হয়ে থাকে। সংগ্রহ করা হয়েছে বিশ্বজিৎ ঘোষের ‘আবুল হাসান’, যতীন সরকারের ‘প্রান্তিক ভাবনাগুচ্ছ’, ‘আমার যেটুকু সাধ্য’, মুহম্মদ এলতাজউদ্দিনের ‘চাঁপাইনবাব গঞ্জ পরিচিতি ও লোকসংস্কৃতি’, ‘নদীও বাড়িতে ফেরে’ সমুদ্র গুপ্ত, ‘ঘাসপাতার ছুরি’ সমুদ্র গুপ্ত, ‘মায়াপথিক’ রায়হান উল্লাহ, ‘উপমা-চিত্রকল্প ও প্রতীক চিহ্নের নন্দনতত্ত্ব: বঙ্কিমচন্দ্র ও রবীন্দ্রনাথের উপন্যাস, ‘লোক সংস্কৃতির অঙ্গনে’ মুহাম্মদ আবদুল জলিল, আমিনুর রহমানের ‘পোড়া রুটি ও কিছু সিনেমার গল্প’, রব্বানী চৌধুরী সম্পাদিত ‘মরমি সাধক তৌরিচ মিয়া’। এমন কিছু বই সংগ্রহ করেছি এবং আরও কিছু বই সংগ্রহ করব বলে আশা রাখি।
এবারের বইমেলায় আগের বইমেলা থেকে কি কোনো পার্থক্য রয়েছে? থাকলে তা কি?
বঙ্গ রাখাল: আছে তো বটেই। আগে যে প্রকাশনী ছিল তার সাথে অনেক নতুন প্রকাশনী তো যুক্ত হয়েছে। আবার দু একটা প্রকাশনী গতবার থাকলেও এবার নিয়মভঙ্গের কারণে মেলায় অংশগ্রহণ করতে পারেনি। খাবারের দোকানগুলো একটা তাবুর মধ্যে আশ্রয় নিয়েছে। ওয়াশরুমে জুতা খুলে স্যান্ডল পরতে হচ্ছে। ‘লেখক বলছি মঞ্চ’ প্রকাশ্যে না রেখে আড়ালে রাখা হয়েছে বলে মনে হয়েছে। আবার কিছু স্টল দ্বীপের মত মূল স্টলের বাইলে অবস্থান করছে বলে মনে হয়েছে। যে কারণে পাঠকের এই দ্বীপ চিনতেও একটু ঝামেলা পোহাতে হচ্ছে।
বইমেলায় আগত পাঠকদের উদ্দেশ্য কি বলতে চান?
বঙ্গ রাখাল: তাদের উদ্দেশ্যে কি আর বলার আছে। তারা আসছে ঘুরছে পছন্দ হলে বই কিনছে নিজেছের সাধ্য অনুযায়ী এটাই তো। এভাবে আসতে আসতে হয়তো একসময় বই কিনবে। আর সবাইকে বই কিনতে হবে কেনো? যার যে জিনিসের প্রয়োজন সে যে কোনভাবেই হোক না কেনো? সে তার প্রয়োজন মেটাবেই। কারও বই কেনা বা বই পড়ার ইচ্ছে থাকলে সে এই প্রয়োজনীয়তা থেকে নিজেকে এড়িয়ে রাখতে পারবে না। সবার মত আমি তাদের বই কেনার কথা বলতে নারাজ। এই বইমেলাকে কেন্দ্র করে যে লেখক-পাঠকের মিলন মেলার সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে এটাই কম কিসে?
1 Comments
কবি বঙ্গ রাখালকে অভিনন্দন।
ReplyDelete