Advertisement

উন্মেষ

আমাকে যারা গড়েছেন: মনদীপ ঘরাই

 

unmesh mondip ghorai
 

শৈশবের সবচেয়ে বড় শত্রু কে? হোঁচট খেতে পারেন আমার কথা শুনে? শৈশবের বড় শত্রু হলেন শিক্ষক। পড়ার ভয়, মারের ভয় সাথে স্কুলে যাওয়ার ভয়। শিশু হিসেবে এর চেয়ে বেশি বিবেচনাবোধ দেখানো সম্ভব ছিলোনা। যেখানে স্কুল ছিল আতঙ্ক, শেখানে শিক্ষক ভালো লাগার সুযোগ কোথায়!
কিন্ডারগার্টেন আর প্রাইমারির গন্ডিটা পেরিয়েছে এরকম ভয়ে ভয়েই।

জীবনের মোর ঘুরেছে ১১টি স্কুল পরিবর্তন করে ক্লাস নাইনে ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজে গিয়ে। শিক্ষকদের ভালবাসতে শিখেছি এই বিদ্যাপীঠ থেকেই। বাবা- মা থেকে দূরে হোস্টেল জীবনে তারাই তো ছিলেন অভিভাবক। 'ব্যর্থ বানানে আকার দিলে ব্যর্থ হবে' এমন করেই পড়া শেখাতেন ফেরদৌস আরা ম্যাডাম। এই সেদিন দেখলাম কলেজ থেকে বিদায় নিচ্ছেন ম্যাডাম। কেন যেন মনে হয় এখনও কলেজে গেলেই ম্যাডামের দেখা পাব।

তবে পাগলের মত ভয় পেতাম এরশাদ আহমেদ শাহীন স্যারকে। আবার জীবনটা দিয়ে দিতে ইচ্ছে করত স্যারের জন্য। অসুস্থ্যতার জন্য এইচএসসির টেস্ট পরীক্ষা দিতে পারিনি। স্যার নিজে বন্ড দিয়ে প্রিন্সিপাল স্যারের কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে এসেছিলেন। স্যারের মান রেখেছিলাম ফলাফলে। হাউজ অর্থাৎ হোস্টেলে আগলে রাখতেন আব্দুল মুগনি স্যার। আজ স্বীকার করতে দ্বিধা নেই, স্যারকে ফাঁকি দিয়ে দুপুরে কিংবা রাতে হাউজ থেকে পালিয়েছি অগনিত বার। কেন জানি মনে হত, স্যার সব বুঝতেন!

এইচএসসি পর্যন্ত মডেল কলেজ ছেড়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে। বয়সের সাথে সাথে শিক্ষক হয়ে যায় বন্ধুর কাছাকাছি। সাহিত্যের মুন্সিয়ানা বুঝিয়েছেন মাশরুর শহীদ হোসাইন স্যার। এখনো স্যারকে মনে হয়, না পড়া কোনো বইয়ের মতো রহস্যময়। ফোন আধুনিক হলে যদি তার নাম স্মার্টফোন হয়, তাহলে টিচার আধুনিক হলে তাকে স্মার্ট টিচার বলা যেতে পারে। এক কথায় দুটি নাম, সানিয়াত সাত্তার স্যার আর সুমন সামসেদ মুর্তজা স্যার আমার চোখে স্মার্ট টিচার। ইংলিশ বলা, পড়ানোর স্টাইল সবকিছুই ছিল আধুনিক।

ফারজানা জেবিন ম্যাডামকে বাদ দেব কিভাবে? বন্ধুবৎসল এই শিক্ষককে 'আপা' ডেকে বকা খেয়েছিল রুমমেট রাসেল মাইনুদ্দীন। এছাড়া কাউকে বকতেও শুনিনি কখনও। পুরো বিশ্ববিদ্যালয় জীবন দূরে দূরে থেকে হঠাৎ করেই অনেক আপন করে নিয়েছিলেন সাবেরা সুলতানা ম্যাডাম। মাস্টার্সের ক্লাসে মেন্যু পছন্দ করে খাওয়া, ফ্লেক্সিবেল স্টাডি প্যাটার্ন আর তুই করে ডাকা। আমাকে ভুলে যেতে পারেন ম্যাডাম, আমি ভুলবো না। রুমানা হোসাইন ম্যাডামকে কখনও বলা হয়নি, আপনার চোখ দেখলে শুধু মায়ের কথা মনে পড়তো। এতো মিল কিভাবে!

জীবন কেন এমন বৈপরীত্যের খেলায় পূর্ণ! ফিরে যেতে চাই ছোট্ট মনদীপ হয়ে শৈশবের ক্লাসরুমে। শৈশবের অবুঝ বৈরিতা যে এখন রূপ নিয়েছে সীমাহীন ভালবাসায়, তা কি জানেন আমার শিক্ষাগুরুরা?
 

'মন, মানুষ আর দরদ গড়ার কারিগর- শিক্ষক।
আর ছাত্ররা আজীবন ভাঙ্গার দলে;
ক্লাস পালিয়ে প্রথা ভাঙ্গা,
শেষমেষ নিজেকে ভেঙ্গে পরিণত মানুষে পরিণত করার ব্যর্থ চেষ্টা'


লেখক: কবি ও সরকারি কর্মকর্তা।

Post a Comment

1 Comments

  1. এক কথায় অসাধারণ!! 😍
    শরীয়তপুর থেকে শিশিরের ভালোবাসা গ্রহণ করুন।

    ReplyDelete