বঙ্গ রাখাল, তিনি একাধারে কবি প্রাবন্ধিক ও মুক্তিযুদ্ধ গবেষক। যার কবিতায় পাওয়া যায় মা মাটির সোদা ঘ্রাণ। তিনি সব সময়ই বর্ণনাত্মক কবিতায় নিজের জারিত কথামালায় যেন পাঠককে বলতে থাকেন। কবি বিচ্ছুরিত জীবনকে দেখতে চান নানা আঙ্গিকে নানা মাত্রায়। তিনি কাজ করেছেন লালন, পাগলা কানাই, পাঞ্জু শাহ, শ্রীকান্ত ক্ষ্যাপা, দারোগ আলী বয়াতিসহ অজস্র লোক কবিকে নিয়ে। এই কবি ও গবেষকের সাথে কথা হয় উন্মেষ সাহিত্য সাময়িকীর সাথে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সাজেদুর আবেদীন শান্ত-
উন্মেষ সাহিত্য সাময়িকী: কেমন আছেন?
বঙ্গ রাখাল: ভাল আছি। আপনি?
উন্মেষ সাহিত্য সাময়িকী: জি ভাল। আপনার নামসহ সংক্ষিপ্ত পরিচয় ও সম্মাননা পড়ালেখা সম্পর্কে জানতে চাই?
বঙ্গ রাখাল: সার্টিফিকেট নাম: আলীনুর ইসলাম হলেও লেখক নাম হিসেবে আজ বঙ্গ রাখাল প্রতিষ্ঠিত। জন্ম ১২ জুন, ঝিনাইদহের শৈলকূপা উপজেলার গোলকনগর গ্রামে। সাভার গণ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রী নিয়েছি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত ঢাকা স্কুল অফ ইকনোমিকস থেকে পোস্ট-গ্র্যাজুয়েট ডিপ্লোমা ইন ইকোনমিকস ডিগ্রী এবং গণহত্যা-নির্যাতন ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষণা কেন্দ্র থেকে গণহত্যার উপর পোস্ট-গ্র্যাজুয়েট ডিগ্রী অর্জনসহ বর্তমানে আমি বাংলাদেশ ইতিহাস সম্মিলনীর সদস্য। আমার কর্মজীবন শিক্ষকতা দিয়ে শুরু হলেও বর্তমানে আমি সমাজসেবামূলক একটা বেসরকারী সংস্থায় কর্মরত।
আমার প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে-সংস্কৃতির দিকে ফেরা (প্রবন্ধ, ২০১৫), লোক মানুষের গান ও আত্ম অন্বেষণ (গবেষণা, ২০১৬), মানবতাবাদী লালন জীবন অন্বেষণ (প্রবন্ধ, ২০১৭), হাওয়াই ডাঙ্গার ট্রেন (কবিতা, ২০১৮), মনীষা বীক্ষণ ও অন্যান্য (প্রবন্ধ, ২০১৮), অগ্রন্থিত রফিক আজাদ (সম্পাদনা, ২০১৯), পাগলা কানাই ও তাঁর তত্ত¡ দর্শন (সম্পাদনা, ২০১৯), লণ্ঠনের গ্রাম (কবিতা-২০১৯), যৈবতী কন্যা ইশকুলে (কবিতা, ২০২০), কবিতার করতলে (প্রবন্ধ, ২০২০), অন্ধ যাজক (কবিতা-২০২১), ছোটবোয়ালিয়া-জয়ন্তীনগর-বসন্তপুর গণহত্যা (অভিসন্দর্ভ-২০২১)।
প্রবন্ধে পেয়েছি-আবুল মনসুর আহমদ পুরস্কার ২০২০ ও জলধি সম্মাননা- (কবিতা ২০২১)। সম্পাদনা করছি ছোট কাগজ : নিহারণ।
উন্মেষ সাহিত্য সাময়িকী: লেখালেখি শুরুর গল্পটা জানতে চাই?
বঙ্গ রাখাল: লেখালেখিতে আসা কোন প্লান করে না কিংবা কোনদিন লেখালেখি করব বলেও মনে হয়নি। তবে ছোটবেলায় মায়ের কাছে শুয়ে শুয়ে অনেক গল্প শুনেছি। স্কুলে পড়া অবস্থায় গ্রাম থেকে প্রবাদ-প্রবচন সংগ্রহ করতাম। অনেক ভাল লাগতো। গ্রামে মঞ্চনাটক করেছি এভাবেই কখন যে লেখালেখিতে চলে এসেছি তা বলাটা মুশকিল। তবে অনেক ডাইরী লেখেছি ছোটবেলায় কারও সাথে তর্ক-বিতর্ক হলেও তা ডাইরীতে লেখে রাখতাম। এভাবেই হয়তো শুরু হবে আরকি।
উন্মেষ সাহিত্য সাময়িকী: কখন নিজেকে লেখক মনে হলো?
বঙ্গ রাখাল: একবার ঈদের দিনে আমরা ছোটরা নাটক করেছিলাম। সেই নাটক দেখে বড়দের নাটক আর কেউ দেখেনি আর এই নাটকটা লিখেছিলাম আমি। এই যে নাটক লেখা এবং অভিনয় করে প্রশংসা যোগানো কার না ভাল লাগে। এই সময় থেকেই মনের মধ্যে ভাল লাগা সৃষ্টি হতে লাগল। তখন থেকেই নিজেকে আলাদা এবং একজন অন্য রকম মানুষ বা লেখক বলেই মনে হতে লাগল। তবে লেখক হিসেবে জোড়ালভাবে মনে হয়েছিল যখন ঢাকা থেকে আমার ‘দেশের মাটি’নাম একটি কবিতা অনেকের কবিতার সাথে কবিতার বইয়ে স্থান পেয়েছিল। তখন ছাপা অক্ষরে কবিতাটা দেখে অনেকের কবিতাটি দেখেয়ে চিলাম এবং নিজেকে একটু আলাদা করে চিনতে শুরু করেছিলাম। এটাই বুঝি আমাকে লেখক হতে অনেকটা তাগাদা দিয়েছিল।
উন্মেষ সাহিত্য সাময়িকী: লেখালেখি করতে গিয়ে কি কখনও কোনো প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হয়েছে?
বঙ্গ রাখাল: কখনো হয়েছি কি এখনও তো হয়েই যাচ্ছি। বাংলাতে পড়ার কারণেই সবাই নাস্তিক বলা শুরু করেছিল। মা নিজেও চাইনি আমি লেখালেখি করি। এটা অবশ্য তিনি বলেন ভয় থেকে। অনেকে মাকে বলত যারা লেখালেখি করে তারা মানুষ হয় না। ছেলে গোল্লায় গেল মানুষ করতে পারলে না। সে কোনদিন সংসার চাকরী কিছুই করবে না। এভাবেই মাকে বোঝাত আর মা এসব কথা শুনে কাঁদত। মা বলত আমার এমন ছেলে তো চাইনি বাবা লেখালেখি ছেড়ে দাও। লেখালেখি না করেও তো ভাল কিছু করা যায় তা কি করতে পার নাহহ। নাটক করার সময়ও বাড়ি থেকে বাঁধা পেয়েছি।
উন্মেষ সাহিত্য সাময়িকী: আপনার প্রিয় লেখক কে এবং কেনো?
বঙ্গ রাখাল : আমার প্রিয় লেখকের তালিকায় অনেকেই রয়েছে। এক এক জন এক একদিক থেকে খ্যাতির শীর্ষে আরোহন করেছেন। তবে তাদেরকে নির্দিষ্ট করে বলাটা অনেক মুশকিল।
উন্মেষ সাহিত্য সাময়িকী: পেশা হিসেবে লেখালেখি কতটা স্বাধীন?
বঙ্গ রাখাল: আসলে আমরা কি স্বাধীন? আপনিই জবাব দিন। স্বাধীনতার বুলি আওড়াচ্ছি কিন্তু কোথাও স্বাধীন না। লেখালেখি তো আরও গভীরের বিষয়। আর আমাদের এখানে লেখালেখি স্বাধীন পেশা হিসেবে এখনও মাথা তুলে দাঁড়াতে পারেনি।
উন্মেষ সাহিত্য সাময়িকী: লেখা কখন একটি স্বার্থক লেখায় পরিণত হয়?
বঙ্গ রাখাল: লেখা তখনই স্বার্থক লেখা হয়ে উঠবে যখন আপনি যা বলতে চেয়েছে তা সঠিকভাবে বলতে পেরেছেন।
উন্মেষ সাহিত্য সাময়িকী: নিজেকে কি কখনও লেখক মনে হয়েছে?
বঙ্গ রাখাল: আমি যেহেতু নিজেকে সপে দিয়েই লেখালেখি করতে এসেছি এই লেখালেখি আমার রক্তে মিশে আছে ইচ্ছে করলেই আমি একে ছিটকে ফেলে দিতে পারব না। এটি আমার অস্থি-মজ্জায় মিশে আছে একারণেই নিজেকে লেখক হিসেবে মনে হয়। তবে এখানে একথাও বলে রাখা ভাল যে লেখক হওয়ার জন্য যতটা সাধনা দরকার হয় তা আমার মধ্যে এখনও তৈরি হয়নি শিক্ষার মধ্যে আছি মাত্র।
উন্মেষ সাহিত্য সাময়িকী: অনেক ধন্যবাদ কবি আমাকে সময় দেওয়ার জন্য।
বঙ্গ রাখাল: আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ।
0 Comments