Advertisement

উন্মেষ

সংগ্রামই লেখকের বড় শক্তি : সালাহ উদ্দিন মাহমুদ


পেশাগত পরিচয়ে সালাহ উদ্দিন মাহমুদ একজন সাংবাদিক। ছাড়া করেন লেখালেখি। তার জন্ম মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলার উড়ারচর গ্রামে। তিনি বাংলা সাহিত্যে স্নাতকসহ প্রথম শ্রেণিতে স্নাতকোত্তর লাভ করেন। ছোটগল্প লেখক হিসেবে পরিচিতি পেলেও তিনি কবিতা, প্রবন্ধ, উপন্যাস, নাটক, কলাম, শিশুতোষ গল্প সাহিত্য সমালোচনা লিখে থাকেন। তার সাতটি বই প্রকাশ হয়েছে। তিনি সুনীল সাহিত্য পুরস্কারসহ একাধিক পদক সম্মাননা লাভ করেছেন। তার লেখালেখি নিয়ে কথা বলেছেন উন্মেষ সাহিত্য সাময়িকী’র সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সাজেদুর আবেদীন শান্ত -

উন্মেষ সাহিত্য সাময়িকী: কেমন আছেন? করোনাকালে লেখালেখি কেমন চলছে?

সালাহ উদ্দিন মাহমুদ: শারীরিকভাবে ভালো আছি। মানসিকভাবে ভালো নেই। লেখালেখি ভালোই চলছে। মমতানামে একটি উপন্যাস লিখে শেষ করলাম। বইমেলায় হয়তো পাঠকের হাতে পৌঁছবে। এছাড়া গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ, নাটক লিখেছি। করোনা লেখায় কোনো ব্যাঘাত ঘটাতে পারেনি। নিয়মিতই লিখছি।

উন্মেষ সাহিত্য সাময়িকী: প্রথম লেখা প্রকাশের অনুভূতি সম্পর্কে যদি বলতেন, কোথায় প্রথম লেখা প্রকাশ হয়?

সালাহ উদ্দিন মাহমুদ: প্রথম লেখা প্রকাশের অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। লেখালেখি শুরুর পর থেকেই সবাই চায় তার লেখা প্রকাশ হোক। তাই প্রকাশের সেই মুহূর্তটি সত্যিই অবর্ণনীয়। আমার প্রথম লেখা প্রকাশ হয় ২০০২ সালে নিজ জেলা মাদারীপুরের একটি পত্রিকায়।

উন্মেষ সাহিত্য সাময়িকী: আপনার ভেতর লেখক সত্তার বিকাশ ঘটে কবে থেকে? কখন মনে হলো আপনি একজন লেখক?

সালাহ উদ্দিন মাহমুদ: লেখক সত্তার উন্মেষকাল বলতে গেলে জন্মলগ্ন থেকেই বলতে পারি। তবে বিকাশের সময়টা দীর্ঘকাল। কারণ প্রতিনিয়তই শিখছি। এখনো বিকশিত হচ্ছি। বলতে পারেন, আমি স্বভাবতই লেখক। তবে যখন কারো মুখ থেকে কবিডাকটি শুনি, তখনই নিজেকে কবি বা লেখক মনে হয়।

উন্মেষ সাহিত্য সাময়িকী: আমরা জানি, দীর্ঘ একটা পথ আপনি অতিক্রম করেছেন লেখালেখিতে? সম্পর্কে আপনার অনুভূতি কি?

সালাহ উদ্দিন মাহমুদ: আসলে এই পথের শেষ নেই। লেখালেখির ২০ বছরও আমার কাছে খুব কম সময় মনে হয়। প্রতিনিয়ত শঙ্কায় থাকি, যদি আমার লেখক সত্তাটি হারিয়ে ফেলি। তাই শত কষ্ট হলেও লেখালেখি থেকে অব্যাহতি নেইনি। চালিয়ে গেছি। চালিয়ে যাচ্ছি। তবে এই পথ চলায় অনেকের দিকনির্দেশনা, উৎসাহ পেয়েছি। যা আসলেই বিস্মৃত হওয়ার নয়।   

উন্মেষ সাহিত্য সাময়িকী: কবিতা, প্রবন্ধ না-কি গল্প, কিসে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন?

সালাহ উদ্দিন মাহমুদ: তিনটি মাধ্যমই আমার প্রিয়। স্বাচ্ছন্দ্যবোধ না করলে আমি সেই কাজ করি না। আমার তিনটি গল্পের বই, দুটি কবিতার বই, একটি সাক্ষাৎকার একটি সচেতনতামূলক বই রয়েছে। এবার যুক্ত হবে উপন্যাস। সবই আমার পরিশ্রমের ফসল। তবে আমি কথাশিল্পে বেশি কাজ করতে চাই। পাশাপাশি কবিতাও লিখে যাবো। মাঝে মাঝে মঞ্চ নাটকও লিখি। যখন যা ইচ্ছা করে, তা- করি।

উন্মেষ সাহিত্য সাময়িকী: বর্তমানে আপনি যে পেশায় আছেন, তা আপনার জন্য কতটা স্বস্তিদায়ক?

সালাহ উদ্দিন মাহমুদ: ২০০৭ সাল থেকে সাংবাদিকতার সঙ্গে যুক্ত আছি। কাজের ক্ষেত্রে স্বস্তি না পেলে হয়তো টানা ১৩ বছর পেশায় টিকে থাকতে পারতাম না। আমার মনে হয়, পেশার সঙ্গে যুক্ত থেকেই স্বস্তিতে লেখালেখি করতে পারছি। 

উন্মেষ সাহিত্য সাময়িকী: লেখালেখির ক্ষেত্রে বিদেশি কোনো লেখক কি আপনাকে প্রভাবিত করেছে বা অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে?

সালাহ উদ্দিন মাহমুদ: স্বীকার করতে দ্বিধা নেই যে, আমি বিদেশি লেখকের বই কম পড়েছি। কারণ বাংলা সাহিত্যের যত লেখক আছেন, তাদের সবার বই পড়েই তো শেষ করতে পারছি না। তারপরও ম্যাক্সিম গোর্কি মোপাসা অনুপ্রেরণা জোগায়। 

উন্মেষ সাহিত্য সাময়িকী: কতটা পথ সংগ্রাম করেছেন? কখনো কি ব্যর্থতা দিয়ে সফলতাকে মেপেছেন?

সালাহ উদ্দিন মাহমুদ: সংগ্রাম তো এখনো করছি। সংগ্রাম কখনো শেষ হয় না। আর এটাই লেখকের বড় শক্তি। লেখক সংগ্রামী না হলে সফল হতে পারেন না। ব্যর্থতা আমাকে কাতর করতে পারে না। আবার নিজেকে সফলও দাবি করি না। বলতে গেলে, ছাত্রজীবন থেকেই সংগ্রাম করছি। কখনো ব্যর্থ হয়েছি, কখনো সফল হয়েছি। কিন্তু জীবনে একদিনও কর্মহীন ছিলাম না। এটা জীবনের সবচেয়ে বড় পাওয়া।

উন্মেষ সাহিত্য সাময়িকী: ফেসবুক সাহিত্য বাংলা সাহিত্যের শত্রু না কি মিত্র?

সালাহ উদ্দিন মাহমুদ: ফেসবুক সাহিত্য বলতে কিছু নেই। সবই সাহিত্য। ওটা প্রচারের একটা প্লাটফর্ম। আগে ডায়েরিতে লিখে দশজনকে দেখাতাম; এখন ফেসবুকে প্রকাশ করে দশজনকে দেখাই। ফলে এই চর্চাকে আমি শত্রু বা মিত্র কোনোটাই বলবো না। এটা আসলে যুগের দাবি।

উন্মেষ সাহিত্য সাময়িকী: আপনার মতে, ওপার বাংলা-এপার বাংলার সাহিত্যচর্চার পার্থক্য কী?

সালাহ উদ্দিন মাহমুদ: আমি এপার-ওপার বুঝি না। বাংলা ভাষা বা বাংলা সাহিত্য যেখানে আছে, সবই আমার কাছে সমান। তবে যার যার সংস্কৃতি, কৃষ্টি, সামাজিক, রাষ্ট্রীয় নীতি অনুযায়ী সাহিত্যচর্চা হবে। এটাই স্বাভাবিক। ব্যক্তিতে ব্যক্তিতে যেমন পার্থক্য, রাষ্ট্রে রাষ্ট্রেও তেমন পার্থক্য থাকবে। সবমিলিয়ে বাংলা সাহিত্য আমার কাছে ধর্তব্য। ওপার বাংলা তাদের রীতিতে চলবে, এপার বাংলা তাদের রীতিতে চলবে। 

উন্মেষ সাহিত্য সাময়িকী: শুনলাম, ওপার বাংলার বই বাংলায় আসে- লেখক হিসাবে এটাকে কী হিসাবে দেখছেন?

সালাহ উদ্দিন মাহমুদ: নিঃসন্দেহে এর বিরোধিতা করবো না। আদান-প্রদান দোষের কিছু নয়। এপার বাংলার বইও তো ওপার বাংলায় যাচ্ছে। তবে সংখ্যায় হয়তো কম। সে ব্যর্থতা আমাদেরই। আমাদের আরও সক্রিয় হতে হবে। বাংলা ভাষার পাঠকের সঙ্গে সম্পর্ক বাড়াতে হবে। শুধু ওপার বাংলা নয়, এখন বিশ্ববাংলায় ছড়িয়ে দিতে হবে আমাদের লেখা। ডিজিটাল বাংলাদেশে বসে এমন ভাবনা অমূলক নয়। 

উন্মেষ সাহিত্য সাময়িকী: তরুণ লেখকদের জন্য আপনার উপদেশ?

সালাহ উদ্দিন মাহমুদ: আমি নিজেই তরুণ। এখনো শিখছি। আমি উপদেশ দিতে পারি না। তবে পরামর্শ হিসেবে বলতে পারি, বেশি বেশি বই পড়ুন। বইয়ের খবর ছড়িয়ে দিন সবখানে। লেখার আগে অন্তত বানান, বাক্যগঠন, শব্দচয়ন সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে নিন। অনুকরণ থেকে বেরিয়ে এসে নিজে কিছু সৃষ্টি করার চেষ্টা করুন। সফলতার পেছনে ছুটবেন না। সফলতাই বরং আপনার পেছনে ছুটুক।

 

 

Post a Comment

0 Comments