Advertisement

উন্মেষ

নীলিম কুমারের কবিতা : করোনা আক্রান্তের সঙ্গে প্রেম

(১)

ইটালি থেকে তিনি 
যখন ফিরে এসেছিলেন
তখন তাঁর নিঃশ্বাসে কষ্ট।

ইটালির ছাত্র ছাত্রীকে
দুই হাতে অঙ্ক শেখানো
তাঁর হাত দুটি
যে দুটি প্রথম পরিচয়ের দিনই
আঁকড়ে ধরেছিলাম
প্রথম পরিচয়ের দিনই ভুলে
গিয়েছিলাম কার ছিল কোন হাত!

সেই দুটি হাত আজ আমার
হাত ধরা থেকে বিরত ছিল
আমার হাত দুটিও আজ ছিল ভয়াতুর

দুজনেরই ঠোঁট
এরকম আচরণ করছিল
যেন দেখতে পাচ্ছিল না একে অপরের ঠোঁটের
কম্পন!

আরব সাগরের বালুচরে
তিনি আমাকে ডেকেছিলেন
তিনি সবসময় বলেন
আরব সাগরের ঢেউয়ের
ধপ ধপানি তিনি বয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছিলেন

তিনি সবসময় প্রেমের কথাগুলি
এই ধপ ধপানি থেকে
আরম্ভ করতেন

আমি বলেছিলাম এক মিটার দূরে বসব
তিনি বলেছিলেন দেড়মিটার
বলেছিলেন, সবসময়েই দেড় মিটারের
অঙ্ক করতে ভালো
তিনি অঙ্ক জানতেন


কেউ কথা বলছিলাম না
দুজনেই চোখের জলে কথা বলছিলাম
যা ছিল আমাদের বলার।
দুজনের চোখের জলের নদী
দেখে আরব সাগরও
হয়েছিল ম্রিয়মান

তিনি বলেছিলেন-
তোমাকে শেষবারের মতো
দেখতে এসেছি
আমি পুলিশকে খবর দিয়েছিলাম

(২)

তাকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল
যে হাসপাতালে
তাতে কেবল কোভিড ১৯ ভাইরাসগুলি
কথা বলছিল
ওদের কথা মানেই
দুটো হাতে দ্রুত করা
মৃত্যুর অঙ্ক

তিনি ধপধপানির অঙ্কগুলি করছিলেন
চুমোর অঙ্কগুলি করছিলেন
আমাদের স্পর্শ আর অনিদ্রার
অঙ্কগুলি করছিলেন

অক্সিজেন সিলিণ্ডারটার সঙ্গে
তিনি কথা বলছিলেন
আমাকে যে নামে ডাকেন
সেই নামে তিনি ডাকছিলেন
অক্সিজেন সিলিন্ডারটাকে
 
আমি সত্যিই চেয়েছিলাম
তাঁর অক্সিজেন সিলিণ্ডার হতে
একথা তিনি জানতে পেরেছিলেন।

(৩)

একদিন হাসতে হাসতে তিনি
হাসপাতালের বারান্দার সিঁড়ি দিয়ে
নেমে এলেন।

আমার বাষ্পাকুল চোখের দিকে
তাকিয়ে তিনি জিজ্ঞেস করলেন
আরব সাগর আছে কি

আমি বললাম
তুমি আমার আরব সাগর
আমার বুকে তার ধপধপানি

তারপরে
আমরা দুজনেই দৌড়ালাম
সাগর তীরের উদ্দেশ্যে

তাঁর বুকে ছিল না
বিন্দুমাত্র ক্লান্তি
আমার বুকে ছিল হাসির সাগর

আমাদের হাসি মুছে দিবে বলে
বালুচরে তখনও পড়েছিল
পুলিশের পায়ের চিহ্ন এবং
দেড়মিটারের চিহ্নগুলি

স্পর্শলগ্ন এবং নিবিড় আলিঙ্গণে
দুজনেই দেখেছিলাম
দুজনেরই বুকে একই ঢেউগুলির
আসা যাওয়া
আর ঢেউগুলির ফিরে না যাওয়া!

মূল অসমিয়া থেকে বাংলা অনুবাদ : বাসুদেব দাস

Post a Comment

0 Comments