০৩ |
নাহ। পাশেই তো, মিঠুর বাসায় দিনে অন্তত চারবার যেত রূপম। মিঠুও যায় আসে। ওরা খুব ভাল বন্ধু ছিল স্যার। ফজলু বললেন।
ছেলে ফিরলো না। রাতে খবর নেননি কেন? কামরানের কণ্ঠে ঝাঁঝ। ছেলেপুলে ছেড়ে দিয়ে বসে থাকলে হবে!
ভেবেছি ও ফিরে আসবে। মিঠুর বাসায় খোঁজ নিয়েছিলাম। বলল বেরিয়েছে।
মিঠুর বাসা থেকে কখন বেরিয়েছে? বেরিয়ে কোথায় গেল সেই খবর নেবেন না! আশ্চর্য! বেশ বিরক্ত কবির।
এসআই খগেন টুকটুক করে নোট নিচ্ছে। কবির বললেন, মিঠুর বাসার অ্যাড্রেস দেন। আর আপনার ছেলের যত বন্ধু আছে তাদের বাসার ঠিকানা ও ফোন নম্বর লিখে দেন এই কাগজে। আমি দেখছি কী করতে পারি।
হাপুস নয়নে কাঁদছেন রুবিনা। একজন লেডি কনস্টেবল তাকে সামলানোর চেষ্টা করে, কিন্তু মায়ের মন কি আর বাঁধ মানে! কাঁদতে থাকেন রুবিনা।
ওসি সাহেব নানা কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়লো। এই কেসের তদন্তের ভার পড়লো খগেনের উপর। তাকে দেখে যতটা না পুলিশ বলে মনে হয়, তারচে বেশি লেখক বা সাহিত্যিক। তবে সে খুশি মনে তদন্তের ভার নিল। কারণ এর মাধ্যমে ডিটেকটিভ অলোকেশের সাথে তার একটা গভীর সখ্য গড়ে ওঠার উজ্জ্বল সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
ভিকটিম রূপমের বন্ধু মিঠুর বাসায় গিয়ে এসআই খগেন যেসব তথ্য পেলো তাতে উল্লেখযোগ্য কিছু নেই। মিঠু জানালো কাল রাত দশটার কিছু পরে রূপম ওর বাসা থেকে বেরিয়ে গেল। রাস্তায় তখন আলো ছিল না, মানে লোডশেডিং চলছে।
গুড পয়েন্ট। খগেন মাথা নেড়ে বলল, আচ্ছা, রূপম নিশ্চয়ই মোবাইল ব্যবহার করতো। ওটা কোথায়?
জানি না স্যার। পাওয়া যায়নি। ফজলু বললেন। মিঠুও কিছু জানে না। তবে এই ছেলেটাকে দেখে খগেনের ভাল লাগেনি। কেমন চোয়াড়ে আর মিচকেমতো দেখতে। ফাজিল নাকি!
খগেন মিঠুর উপর চাপ অব্যাহত রাখে। এই ছেলে নিশ্চয়ই কিছু জানে কিন্তু বলছে না। খগেন নিজে থেকে বলল, এই মিঠু, দিন কয়েক আগে রূপমের সাথে তোর ঝগড়া হয়নি?
এই কথায় থতমত খায় মিঠু। ডাঙায় তোলা মাছের মতো বারবার ঢোক গেলে।
কী হল, জবাব দে! গলা চড়ায় খগেন মিত্র। এখন আর তাকে লেখক বলে মালুম হয় না। সে পুরোদস্তুর পুলিশ অফিসার।
মিঠু তাও কিছু বলে না। তাতে সন্দেহ বাড়ে খগেনের। ধমকের সুরে বলল, কী রে, শামুকের মতো খোলস গুটয়ে থাকলে চলবে! ভুলে যাস নে, এটা খুনের কেস। অপরাধ প্রমাণ হলে ফাঁসি নয়তো যাবজ্জীবন জেল। জেলে বসে ঘাস কাটবি নয়তো ফুলের বাগানে পানি ছিটাবি। পারবি না?
এমনভাবে খগেন বলল যেন মিঠুই খুনি এটা সে মোটামুটি ধরে ফেলেছে।
আমি কিছু করিনি স্যার। ঝগড়া আমাদের প্রায়ই হত। হাতাহাতিও হত। বন্ধুদের মধ্যে এসব হয় না, বলেন!
মিঠুর কথা শুনে মায়া হয় খগেনের। নাহ, এই ছেলে খুন করতে পারে না। তাছাড়া মিঠুর একার পক্ষে ওর বয়সী একটা ছেলের গলা টেপাও সম্ভব নয়। অবশ্য সাথে যদি সোমত্ত সাগরেদ থাকে তাহলে সে আলাদা কথা।
কিন্তু ঘাড়ের পেছনে ওই ছোট্ট ছিদ্র! ওটা কী!
ঘটনার কয়েক দিন পর রূপমের বাবা-মাকে থানায় ডেকে পাঠায় এসআই খগেন মিত্র। ততক্ষণে ছেলের লাশ দাফন হয়ে গেছে। ওসি সাহেব নিজেও ছিল। তাদের প্রশ্ন একটাই- বলুন ফজলু সাহেব, আপনাদের কে এমন শত্রু আছে যে কিনা রাগের বশে আপনার ছেলেকে মেরে ফেলতে পারে!
হেড ডাউন করে বসে থাকেন ফজলু। কথা সরে না রুবিনার মুখে। তিনি শাড়ির আঁচলে চোখ মোছেন।
বলুন মিসেস ফজলু, আপনি কিছু বলুন। আমাদের অনুমান এটা পারিবারিক শত্রুতা। আপনার ছেলে আসলে কারো টার্গেট নয়, বরং আপনাদের উপর প্রতিশোধ নিতে খুনি কাজটা করেছে।
না মানে তেমন তো কিছু মনে পড়ে না। রুবিনা জড়ানো গলায় বললেন। তারপর স্বামীর দিকে ইঙ্গিত করেন তিনি। ওঁর যদি কেউ থাকে!
ওসি কবির স্বামী-স্ত্রীর এই মেলোড্রামা দেখে কনভিন্সড নয়। তার বক্তব্য পরিষ্কার। আপনি এই ধরাধামে থাকবেন আর আপনার কোনো শত্রু পয়দা হবে না তা তো হতে পারে না। শত্রুতা করা বাঙালির স্বভাব। এরা অকারণ গাছের ডগা কাটে, অন্যের পশ্চাতে বাঁশ প্রবিষ্ট করে। এ যেন অনেকটা চিউয়িংগাম চিবানোর মতো। ‘আমি তো এমনি এমনি খাই!’
ঝুটের কারবারে অল্পবিস্তর শত্রু থাকবেই। একথা এসআই খগেন যেমন জানে, ওসি কবিরও জানে। কিন্তু ফজলু তা মানতে নারাজ। নিজের সম্পর্কে তিনি অতি উচ্চ ধারণা পোষণ করেন। এই দুনিয়ায় তার কোনো শত্রু নেই।
ওকে, মানলাম আপনাদের কারো কোনো শত্রু নেই। আপনারা অতিশয় ভালমানুষ। তাহলে বলুন আপনার ছেলে রূপমকে কে মেরেছে! হু ইজ দ্য কিলার!
জানি না স্যার। ওটা বের করার আপনার দায়িত্ব। বেশ শক্ত গলায় বললেন ফজলু।
কথাটা খুব একটা ভালো লাগলো না কবিরের। লোকটা একটু কেমন যেন। বেশি বোঝে, নয়তো বিশ^বেকুব। ছেলের প্রতি তার যেন কোনো দায় নেই, মায়াদয়াও নেই। কান্নাকাটি যা সব রুবিনাই করছেন। ফজলু নিরুত্তাপ গলায় কথা বলছেন। তবে কি...!
এসআই খগেন আর ওসি সাহেব অর্থপূর্ণ চোখ ঠারাঠারি করে। তবে কি এর পেছনে ব্যাটা ফজলুর কোনো হাত আছে! হাত না থাক মাথা আছে, মানে সে-ই কাউকে দিয়ে খুনটা করায়নি তো!
কিন্তু স্যার, নিজের ছেলেকে...! ঠিক মানতে পারে না খগেন।
দুনিয়াটা বড় আজিব জায়গা খগেন। মনে রেখো, তোমার আমার কথায় জগৎ-সংসার চলে না! আমি নিশ্চিত, এই কেসের পেছনে বড় কোনো ঘাঁপলা আছে। পরকীয়া কাহিনি থাকাও বিচিত্র নয়। কামরান কবির বলল। এবং এখানেই আপাতত তাদের জেরাপর্ব শেষ হয়।
ময়নাতদন্ত রিপোর্ট হাতে নিয়ে কী যেন ভাবছেন ডিটেকটিভ অলোকেশ। দশ-এগারো বছরের একটা বাচ্চাকে এভাবেই খুন হতে হল! এত নৃশংস মানুষ হয়! সো স্যাড।
কীভাবে অলোক ভাই? কেসটা নিয়ে আমি সত্যি খুব পেরেশানিতে আছি। একটু বুঝিয়ে বলবেন প্লিজ! ওসি কবিরের চোখে উৎকণ্ঠা।
ডিটেকটিভ অলোকেশ সাথে সাথে কিছু বললেন না। তিনি টাইম নেন। সাথে শুভও আছে। কথা হচ্ছিল কারওয়ান বাজারের কাছে একটা চিনে রেস্তোরাঁয় বসে। না না, খানাপিনা নয়। পুলিশ চাইলে যেকোন স্থানে বসে গোপনীয় আলাপ করতে পারে। এটা সরকারি কাজ, তাই কারো বাধা দেবার এখতিয়ার নেই।
দেখুন না রিপোর্টে কী লেখা আছে। খুনি বাচ্চাটার মৃত্যু নিশ্চিত করেছে গলা টিপে। কিন্তু ওর ঘাড়ের পেছনে যে সূক্ষ্ম ক্ষত, ওটা কাঁটার খোঁচায় হয়েছে। আমি ভাবছি ওই কাঁটা কোনো মামুলি জিনিস নয়, খুনের সাথে কাঁটার কিছু একটা সম্বন্ধ রয়েছে। খুনের সময় আনুমানিক রাত এগারোটা।
আপাতত এটুকু বলে থামলেন অলোকেশ। সামনে ধূমায়িত কফির মগ। তিনি বেশ আয়েশ করে চুমুক দিলেন, মানে কফির মগের রিমে ঠোঁট ছোঁয়ালেন। যারা অলোককে চেনেন তারা ইতোমধ্যে জেনে গেছেন যে ডিটেকটিভ অলোকেশ রীতিমতো কফিখোর। বা ভদ্র ভাষায় বললে ‘কফিকোহলিক’। কফি না হলে তার চলে না, কফি না খেলে অলোকের মগজ খোলে না। তবে চাও চলে মাঝেসাঝে। ওসি কামরান কবির অন্তত দশ মগ কফির আগাম কার্যাদেশ দিয়ে রেখেছে। ইশারা করা মাত্র ওয়েটার কফি নিয়ে হাজির।
কীভাবে কী এগোনো যায় বলুন! উসখুস করে ওসি কামরান কবির।
ওহ্ ভাল কথা, ভিকটিমের ঘাড় ও গলা থেকে ফিঙ্গারপ্রিন্ট নিয়েছেন তো? পরে ওটা কাজে লাগবে।
তা নিয়েছি। কিন্তু ভাই, কে খুনি তার টিকির নাগালও পেলাম না। আঙুলের ছাপ দিয়ে কী হবে! ওসি সাহেবের কণ্ঠে স্পষ্ট হতাশা। সে বুঝে উঠতে পারছে না, ঠিক কোত্থেকে কীভাবে খুনের তদন্ত শুরু করবে।
ডিটেকটিভ অলোকেশ মৃদু হাসলেন। তারপর বললেন, হতাশ হবেন না প্লিজ। খুনির দেখা আপনি পাবেন, তবে এই কেসে সরাসরি পানি পান করা যাবে না। পানিটা একটু ঘুলিয়ে খেতে হবে।
মানে! অলোকের কথা শুনে ওসি কবির আরো ঘাবড়ে যায়। টিকটিকি বলেটা কী! বলে কিনা সাধ করে পানি ঘুলিয়ে খেতে হবে। সে কি গাধা নাকি যে পানি ঘুলিয়ে খাবে!
টুকটুক করে নোট নিচ্ছে রিপোর্টার কাম সহযোগী শুভজিত। রূপম নামের দশ-এগারো বছরের একটা ছেলে, বলা নেই কওয়া নেই অমনি কেউ তাকে মেরে ফেলল! তাও আবার গলা টিপে। না, এভাবে চলতে পারে না। এ কোন মগের মুলুকে বাস করছি আমরা!
ওসি সাহেব অলোকের মুখ চেয়ে বসে আছে। প্লিজ কিছু বলুন।
হুম। শুনুন কবির ভাই, এই খুনের পেছনে দুটো মোটিভ কাজ করতে পারে। প্রথমত ব্যবসায়িক। হয়তো ঝুট কাপড়ের বিজনেসে ফজলুর সাহেবের সাথে তার প্রতিপক্ষের কোন্দল ছিল। প্রতিশোধ নিতে ফজলুর ছেলেকে সে মেরে ফেলেছে।
ওকে বুঝলাম। আর দুনম্বর কারণ কী শুনি?
ওটা আরো গোলমেলে। ডিটেকটিভ অলোকেশ মাথা নাড়লেন। চিনে রেস্তোরাঁর আলো-আঁধারিতে তাকে ঠিক মার্ক করা গেল না। মানে তার মনোভঙ্গি।
গলা খাঁকরে তিনি বললেন, আমার অনুমান রূপমের বাবা-মা পুরো কথা ভেঙে বলেননি। কিছু কথা ওরা গোপন করেছেন। হয়তো সেখানে এই খুনের রহস্য লুকিয়ে আছে। আপনি ওদের উপর নরজদারি করুন। লোক লাগান।
কঠিন করে বলছেন ডিটেকটিভ। আরেকটু খোলসা করে বলবেন প্লিজ!
হুম। একটু ভাবুন কামরান, প্রতিপক্ষ কতোটা ভিন্ডিকটিভ হলে এরকম একটা মাসুম বাচ্চাকে খুন করতে পারে! ব্যাপারটা পারসোনাল বলেই মনে হয়। আপনি একটা কাজ করুন ভায়া, ওদের দুজনকে মানে ফজলু সাহেব আর রুবিনাকে আবার থানায় ডেকে পাঠান। ভালোমতো কড়কে দিলে পেটের কথা উগড়ে দেবে।
তাই! কিন্তু কেন আপনার এমন মনে হল একটু ভেঙে বলবেন! ওসি সাহেব যেন ঠিক খুশি হতে পারেনি।
অলোকেশের কফির খায়েশ জাগে। তিনি ইশারা করেন। ওয়েটার কফি নিয়ে হাজির। কোস্তা ব্র্যান্ড, এসপ্রেসো উইদ স্কিমড মিল্ক।
আপনি কত লোকের সাথে চলাফেরা করেন। আপনার কি মনে হয়নি কবির, ফজলু লোকটা তার ছেলের মৃত্যুতে খুব একটা শোকতপ্ত নন! তাকে যেন খুব স্বাভাবিক লাগছিল।
হুঁ। তা অবশ্য ঠিক। কিন্তু তাতে কি প্রমাণ হয় যে বাপ তার ছেলের খুনের সাথে জড়িত?
জড়িত তা বলছি না। আমি জাস্ট বলতে চাইছি যে ওরা কিছু কথা লুকোচ্ছেন। আপনার কাজ সেই কথাগুলো টেনে বের করা। ওদের কথার ভেতরেই হয়তো খুনের ক্লু লুকিয়ে আছে।
কফির মগে ঠোঁট ছোঁয়ান অলোকেশ। তিনি কাঁটার কথা ভাবছেন। কী এমন কাঁটা যা কি না বাচ্চার ঘাড়ে বিদ্ধ করে দিল নৃশংস সেই খুনি। বড় অদ্ভুত কেস!
***
পরদিন বিকেলে উত্তরা থানায় যান ডিটেকটিভ অলোকেশ। সাথে টিকটিকির লেজের মতো লেপ্টে আছে তার সহযোগী ও বন্ধু শুভজিত। রিপোর্টার বলে নয়, অলোকের সাথে থাকলে শুভর বহুবিধ লাভের সম্ভাবনা। সে গল্প লেখে, রহস্য পত্রিকায় নিয়মিত ছাপা হয় তার গল্প। কিন্তু কাহিনির মাল-মসলা সে পাবে কোথায়! ডিটেকটিভ গল্প তো আর প্রেমের গল্প নয় যে যা হোক কিছু একটা লিখে দিলেই হল। গোয়েন্দা গল্প লিখতে গেলে মগজ খাটাতে হয়, যুক্তিনিষ্ঠ বিশ্লেষণ থাকতে হয়। বোকাসোকা লোকের পক্ষে তা আদৌ সম্ভব নয়।
এসআই খগেন মিত্র কিছু প্রিন্টেড পেপার এনে ওসির সামনে টেবিলের উপর রাখলো। ফজলু-রুবিনা দম্পতির গেল একমাসের ফোনালাপের প্রমাণপত্র।
আচ্ছা, ভাল কথা। রূপম ছেলেটার ফোনের কললিস্ট কি জোগাড় করা গেছে? বা সেই ফোনটা?
মাথা নাড়ে খগেন মিত্র। না স্যার, ফোনটা তো পাইনি। তবে কললিস্ট চাইলে জোগাড় করা সম্ভব।
উঁহু! তাহলে দেরি করছেন কেন! আপাতত কললিস্ট জোগাড় করুন। দেখুন সে কার সাথে বেশি বেশি ফোনালাপ করেছে! আমি আগেই বলেছি, এই কেসে বিস্তর ঘাঁপলা আছে। কে যে কীভাবে কলকাঠি নেড়েছে কে জানে! এসআই খগেনের কাজের ধীরগতিতে উষ্মা প্রকাশ করেন ডিটেকটিভ অলোকেশ। লোকটাকে যত কর্মবীর ও চালিয়াত ভেবেছেন, আদতে সে তেমন নয়। বড়ই গদাইলস্করি চাল খগেনের।
ফজলুর ফোনালাপে আপাতত তেমন কিছু চোখে পড়ে না। খুনের আগে বা পরে সন্দেহজনক কেউ তাকে ফোন করেনি। কেসটা ব্যবসায়িক আঙ্গেল নয় বলেই মনে হয়। সবচে বড় কথা, ফজলু সাহেব ব্যবসা করলেও তাকে ঠিক জাত ব্যবসাদার বলে মনে হয় না। একে বরং দলিললেখক হলে মানাতো ভাল। খুব নিরীহ টাইপ দেখতে।
রূপমের বাবা-মা এলেন একটু পরে। শুভর কলমের ডগা সুড়সুড় করে। মানে সে নোট নিতে প্রস্তুত।
আসেন, আসেন ফজলু সাহেব, বসেন এখানে। দুটো খালি চেয়ার দেখিয়ে দেয় ওসি কামরান কবির।
তারপর বলেন কেমন আছেন! এমনভাবে কথাটা কবির বলল, যেন থানায় তারা সৌজন্য সাক্ষাত করতে এসেছে।
আমাদের আর থাকা! একমাত্র ছেলে মারা গেলে মানুষ কেমন থাকে বলুন! ফজলু হতাশ ভঙ্গিতে মাথা নাড়লেন। রুবিনা চুপ। তার মুখে কোনো কথা সরছে না। সন্তানহারা মায়ের চেহারা যেমন হয়!
ফজলু সাহেব, আপনাদের ডেকে এনে কষ্ট দেবার জন্য আমি সত্যি দুঃখিত। কিছু মনে করবেন না। ওসি কবির যেন বিনয়ের অবতার। আমাদের দেশের সকল পুলিশ অফিসার যদি এমন হত!
না না, ঠিকাছে। বলুন আপনি কী জানতে চান।
একটু মনে করে বলবেন, আপনার বা আপনার স্ত্রীর সাথে নিকট অতীতে কারো কোনোরকম মন কষাকষি হয়েছিল কি!
ফজলু সাহেব এপাশ ওপাশ মাথা নাড়লেন। মানে তার সাথে কারো কোনো বাদানুবাদ হয়নি। তিনি নিপাট ভদ্রলোক।
রুবিনা, আপনি একটু বলুন না, কারো সাথে কোনো...!
অমনি ঝাঁঝিয়ে ওঠেন রুবিনা। আপনারা কী ভেবেছেন বলুন তো! সেই একই প্রশ্ন বারবার করছেন! বলেছি তো, আমি কারো সাথে তর্কে জড়াইনি। আমি মোটেও ঝগড়–টে মহিলা নই।
আস্তে আস্তে। ভদ্রভাবে কথা বলো। স্ত্রীকে সমঝান ফজলু। যেন বলতে চান, এটা তোমার বাসার ড্রয়িংরুম নয়, এটা থানা। এখানে ওসব গলাবাজি চলবে না।
চলবে...
0 Comments