Advertisement

উন্মেষ

ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ; বাংলা ও বাঙালির অবিস্মরণীয় নাম

তর্ণিকা হাজরা

বাংলা গদ্য সাহিত্যের জগতে বিস্ময়কর  অবিস্মরণীয় প্রতিভা নিয়ে আবির্ভূত হয়েছিলেন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর। উনবিংশ শতাব্দির এই মহান ব্যক্তিত্ব সমাজ, শিক্ষা, ধর্ম, নারী উন্নয়নসহ নানা ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও সক্রিয় অবদান রেখেছেনতাঁর প্রকৃত নাম ঈশ্বরচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় । ১৮২০ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর তিনি ব্রিটিশ ভারতের হুগলি জেলাতে এক দরিদ্র ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেনতিনি বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের জগতকে যেমন সমৃদ্ধ করেছেন, তেমনি সমাজ সংস্কারের ক্ষেত্রেও রেখেছেন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা । ঈশ্বরচন্দ্র তাঁর মেধা, মনন ও   একনিষ্ঠতা্র সহযোগে বাংলা ভাষা ও বাঙালিদের উন্নয়ন  এরজন্য আজীবন নিয়োজিত থেকেছেন।

বহুমেধার ধারক বিদ্যাসাগর সংস্কৃত ভাষা ও সাহিত্যে গভীর পাণ্ডিত্য অর্জনের জন্য ‘বিদ্যাসাগর’ উপাধি লাভ করেন মাত্র ২১ বছর বয়সেসংস্কৃত ছাড়াও তিনি বাংলা ও ইংরেজি ভাষাতেও দক্ষতা অর্জন করেছিলেন। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরই প্রথম বাংলা গদ্যে যতিচিহ্নের সার্থক ব্যবহার করেন যা বাংলা গদ্যসাহিত্যের জগতকে আমূল বদলে দেয়। বর্তমানে প্রচলিত বাংলা গদ্যের মূলকাঠামো নির্মাণে তিনি বিশিষ্ট অবদান রাখেন। মধ্যযুগীয় ভাবধারা থেকে মুক্তকরে বাংলাকে আধুনিকতার পথে চালিত করার অন্যতম কর্ণধার তিনি । আধুনিক বাংলা গদ্য নির্মাণকালে তিনি ভাষার মধ্যে সুশৃঙ্খলতা এনে ধ্বনি-মাধুর্যের সাথে পরিচয় করান। বিদ্যাসাগর তৎকালীন সময়ে বাংলা গদ্যসাহিত্যকে একটি পরিশীলিত ও সুগঠিত রূপ দিতে সবচেয়ে বেশি সচেষ্ট ছিলেন। এ কারনে তাকে আধুনিক বাংলা গদ্যের জনক বলা হয়।

ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর নারী জাতির জন্য নানা সংস্কার আইন প্রণয়ন করেন। মনে-প্রাণে তিনি নারীমুক্তি আন্দোলনের সমর্থক ছিলেন। বিধবাবিবাহের প্রচলন(১৮৫৬)ও পুরুষদের বহুবিবাহ নিষিদ্ধ করণ সেগুলোর মধ্যে অন্যতমতিনি নারীশিক্ষা বিস্তারের পথিকৃত হিসেবেও স্মরণীয় হয়ে আছেন। বিদ্যাসাগরই প্রথম অনুধাবন করেন  যে, দেশ ও জাতির উন্নতিতে দরকার নারীদের শিক্ষিত করে তোলা ও  তাদের উন্নতি ঘটান। এ লক্ষ্যে তিনি শহর ও গ্রামে বহুসংখ্যক বালিকা বিদ্যালয় নির্মাণ করেন। তাঁর প্রচেষ্টাতে ১৮৬৪ সালের দিকে বাংলাতে বালিকা বিদ্যালয়ের সংখ্যা দাঁড়ায় ২৮৮ টির মতো যা নারীদের উন্নয়নে অভাবনীয় অবদান রাখে।

বিদ্যাসাগর সারাজীবন অন্যায়ের প্রতিবাদ করে গিয়েছেন। তবে আর্ত-পীড়িতদের জন্য তাঁর হৃদয় ছিল সহানুভূতিতে আর্দ্র। সর্বদা তাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন, সহায়তা করেছেন, রক্ষা করার চেষ্টা করেছেন সর্বান্তকরণে। তাঁর মমতাপূর্ণ্য হৃদয়ের জন্য তিনি দরিদ্রদের কাছে ‘দয়ার সাগর’ নামেও পরিচিত। 

আজ থেকে ২০০ বছর আগে বাঙালির সমাজ ও সংস্কৃতির উজ্জ্বল নক্ষত্র ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর এই দিনেইজন্মনিয়েছিলেন তিনি তাঁর কর্মের দ্বারা যুগ যুগ ধরে অমর হয়ে থাকবেন বাঙালির অন্তরে। সকল বাঙালির পক্ষ থেকে তাঁর প্রতি রইলো বিনম্র শ্রদ্ধা।

 

শিক্ষার্থীঃ ৪র্থ বর্ষ, বাংলা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

Post a Comment

0 Comments