বিকল্প
মূল অসমিয়াঃ প্রকল্প রঞ্জন ভাগবতী
তুমি আমাকে বিকল্প দিলে…
কবিতা এবং প্রেম।
আমি বেছে নিলাম প্রেম,
কেননা কবিতার সঙ্গেই আমার
প্রেম।
তুমি আমাকে বিকল্প দিলে...
কবিতা এবং জীবন,
আমি বেছে নিলাম জীবন,
কেননা কবিতাই আমার জীবন।
তুমি আমাকে বিকল্প দিলে
তুমি এবং কবিতা।
আমি মুখ ফিরিয়ে নিলাম
কেননা আমি তোমাকেই কবিতা বলে
ভেবে ছিলাম।
একটি আইসক্রিম থেকে আমার জন্ম হয়েছিল
মূল অসমিয়াঃ নীলিম কুমার
একটি আইসক্রিম থেকে
আমার জন্ম হয়েছিল-কথাটা
খুলে না বললে কেউ বিশ্বাস করবে না যে
আইসক্রিম থেকে কীভাবে
মানুষের জন্ম হতে পারে!
কথাটা বলছিঃ
আমার জন্মের আগে থেকে
আইসক্রিম ছিল।অবশ্য
সুলভ ছিল না আজকের মতো।
কেবল প্রচণ্ড গরমের দুপুরবেলাগুলোতে
দুয়েকজন ব্যাপারী
ঘণ্টা বাজিয়ে বাজিয়ে
একটা কাঠের বাক্সের ভেতরে
লাল আর হলদে রঙের
আইসক্রিম বিক্রি করে ঘুরে বেড়াত।
যদিও সেগুলোকে আইসক্রিম বলা হত,
সেগুলোর চরিত্র ছিল বরফের।
বাঁশের কাঠি একটাতে ধরে
যা চুষে চুষে খেতে হত!
সেই ঘণ্টার ঠান্ডা আওয়াজ শুনলে
ঘরের ভেতর থাকতে পারত না
কোনো ছেলে-মেয়ে।
বরফওয়ালার পেছন পেছন একদল
ছেলে-মেয়ে ঘুরে বেড়াত
কয়েকজন বরফ চুষে চুষে এবং
কয়েকজন চুষতে না পেরে
অন্যদের আধা খাওয়া হওয়া পর্যন্ত
পথ চেয়ে চেয়ে!
সেই দলটিতে ছিল একটি
ফ্রক পরা।আর
একজন ছিল হাফপেন্ট পরা,
যার পকেটে ছিল
দুয়েকটা খুচরো পয়সা!
হাফপেন্টটার দিকে
বড় কাতরভাবে তাকিয়েছিল ফ্রকটা—
ফুসলানোর জন্য একটা আধা খাওয়া বরফ।
হাফপেন্টটা ছিল বড় বেশি চতুর
সে জানত ফুসলানোর সমস্ত মন্ত্র!
সে টকটকে লাল রঙের একটা নতুন বরফ
কিনে দিয়েছিল সেই ফ্রকটার হাতে।
সেদিনথেকে
সেই ফ্রকটা
চিরদিনের জন্য
সেই হাফপেন্টটার পেছন পেছন ঘুরে বেড়াল।
সেই ফ্রকটা ছিল আমার মা।
আর সেই হাফপেন্টটা ছিল
আমার পিতা।
রহস্যটা হল সেখানেই
সেই ফুসলানোর আইসক্রিমটা
মা যদি না খেত
আমার জন্মই হত না।
এভাবেই একটা আইসক্রিম
এখন
আইসক্রিম নিয়ে
সবচেয়ে সমস্যায় ভুগছি আমি।
কেননা এই আইসক্রিমকে
আমি কোনোদিন ভালোবাসতে পারলাম না
আর ঘৃণা করতেও।
ঈশ্বর এখন ক্লান্ত
মূল অসমিয়াঃ অরুণ বরুয়া
ঈশ্বর এখন ঘুমিয়ে আছেন
এই কয়েকদিন জাগাবেন না---
ক্লান্ত তিনি।
আপনারা নিজের মতো করে
ধর্মগুলি ভাগ করে নিন
মন্দির মসজিদ গির্জা গুরুদ্বার
গীতা কোরান বাইবেল
কোথাও ঈশ্বরকে খুঁজে পাওয়া যায় না।
কে জানত যে
ধর্ম একদিন মানুষগুলিকে
এভাবে উন্মাদ করে তুলবে বলে।
আদিম মানব ধর্মের আবিষ্কার
করেছিল।
শান্তির জন্য।
মানুষের হৃদয়ে অস্তিত্ব লাভ করা ঈশ্বরের
মৃত্যু হতে শুরু করেছে
ধর্মের কোলে।
ধর্ম ক্রমশ রঙ বদলাল
মূঢ় মানুষের হাতে
সাম্প্রদায়িকতার পোশাক পরল।
ভয়ের কারণ হল
মানুষ থেকে মানুষের।
তাই এখন
কিছু অদ্ভুত আচরণের নাম ধর্ম
একদল হিংসুক দানবের নাম ধর্ম,
মানুষের মধ্যে ঘৃনা ছড়ানো
একটা রাজনীতির নাম ধর্ম।
মার্ক্স হয়তো ঠিকই বলেছিলেন
ধর্ম একদিন আফিঙ হয়ে
নিঃশেষ করবে মানবজাতি।
ধর্মের ঠিকাদারদের জন্য
ঈশ্বর সবসময়েই পণ্য।
ধর্মই ধ্বংসের বীজ ছড়িয়ে
অন্ধকারের কোট পরাতে পারা
ঈশ্বর খুঁজে বেড়াচ্ছে
নিজের অস্তিত্ব।
অনুবাদকঃ বাসুদেব দাস
বাসুদেব দাস ১৯৫৮ সনে অসমের নগাঁও জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তার শৈশব কেটেছে গুয়াহাটি শহরে। ১৯৮২ সনে গুয়াহাটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা সাহিত্য ও ভাষাতত্ত্বে এম এ করেন। তিনি একজন নিয়মিত অসমিয়া সাহিত্যের অনুবাদক। NEINAD এর পক্ষ থেকে অসমিয়া ভাষা- সংস্কৃতির প্রচার ও প্রসারের জন্য Distinguished Life Membership দ্বারা তাকে সম্মানিত করা হয়। তার প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা ১৯ টি।
1 Comments
সুন্দৰ কবিতাৰ সুন্দৰ অনুবাদ
ReplyDelete