হঠাৎ দুনিয়া জুড়ে এক ভয়ংকর রাক্ষসের যেন সৃষ্টি হলে। যার থাবা থেকে বাঁচতে প্রতিটি দেশে লক ডাউন জারি করা হলো।
শুরু হলো সেই রাক্ষস এর সাথে মানুষের জীবন বাঁচানোর যুদ্ধ।
সেই রাক্ষসটির নাম দেয় বৈজ্ঞানিকরা করোনা।
যার নামের সাথে কাজেরও খুব মিল। সে যাকে একবার ধরে তাকে হাজার মিনতির পরও সহজে ছাড়ে না। অর্থাৎ সে কারো প্রতি দয়া- করুনা করে না।
এদিকে সে এসে পৌছালো সবুজ শ্যামলে ঘেরা বাংলাদেশে।
যে দেশে বেশিভাগ মানুষই হতদরিদ্র।
যারা দিন এনে দিন খায়।একবেলা কর্ম না করলে যাদের খাবার জোটেনা। তার মধ্যে এই রাক্ষসের আগ্রমন।
যার জন্য বাংলাদেশ সরকারও দেশের মানুষের প্রাণ বাঁচাতে সকল প্রকার কাজ -কর্ম বন্ধ করার ঘোষণা দিলো।
এবং অসহায় মানুষদের জন্য বিভিন্ন খাবার দ্রব্যসামগ্রী সরকারের কাছ থেকে দান করতে থাকলো।
কিন্তু এই দানে কয়দিনই বা চলে।তার মাঝে আবার সরকারের কিছু কর্মচারী সম্পূর্ণ দ্রব্যসামগ্রী তাদের দেয় না।অর্ধেক তারা লুকিয়ে রাখে।
ফলে এই অল্প দানে ৬/৭জনের সংসার কিভাবে চলবে ?
অসহায় জয়নাল তার পরিবার নিয়ে কর্মহীন হয়ে পড়াতে খুব কষ্টে দিন কাটাচ্ছে।
মাঝে মধ্যে রিক্সা নিয়ে বের হলেও রাস্তায় লোকজন না থাকাতে তেমন ভাড়া পায় না।ফলে খুব অল্প আয়ে তার ৬জনের সংসার চালাতে পারে না।
একদিকে ছোট ছোট ছেলে মেয়ে আছে কত কিছু আবদার করে তা জয়নাল পূরণ করতে পারে না।
একদিন দুপুর বেলা জয়নাল খালি পেটে রিক্সা নিয়ে রাস্তায় বের হয়।
প্রচন্ড রোদ মাথার উপর জয়নালের বয়সও হয়েছে।
এমন অবস্থায় দুপুর থেকে সন্ধ্যা অব্ধি কলের পানি খেয়ে একটা ভাড়া খাঁটার
জন্য ঘুরে ফিরে।
আচমকা একদল যুবক এসে ঘরে ফিরে যাও যাও বলে জয়নালের শেষ সম্বল রিক্সাটা ভেঙ্গে দেয়।
এইদিকে না পেলো একটা ভাড়া আর না পেলো খেতে দুইমুঠো ভাত। এরই মধ্যে রিক্সাটা হারালো।
রিক্সা বাঁচাতে গিয়ে নিজের গায়েও আঘাত পেয়েছিল জয়নাল।
আঘাত প্রাপ্ত অবস্থায় জয়নাল রাস্তায় মাথায় হাত দিয়ে নীবরে চোখের জল ফেলে কাঁদতে লাগলো।
যখন একটু রাত হলো আঁধারে গোপনে বাড়ি ফিরলো জয়নাল।
জয়নাল ভেবেছে এতক্ষনে হয়তো ছেলেমেয়েরা ঘুমিয়ে পড়েছে।
কিন্তু না বড়রা ঘুমালেও ছোট দুই ছেলেমেয়ে না ঘুমিয়ে বসে আছে।তারা ঘুমাবেই বা কেমনে রাতের খাবার যে তাদের জুটেনি কপালে।
এদিকে যখন জয়নাল বাড়িতে ঢুকলো তখনই তারা দৌড়ে এলো বাবার কাছে, এসে দেখে বাবার হাত খালি।
কিছু না বলে চুপচাপ তারা আবার ঘরে চলে গেলো।
স্ত্রী জবা বলে,বাচ্ছারা কিছু খায়নি।
অথচ জয়নালের গায়ের আঘাত তার চোখে পড়ল না তখন।
জয়নালও আর কিছু না বলে চুপচাপ সেই খালি পেটেই বিছানায় শুয়ে পড়লো।
রাত তখন ৩টা জয়নাল লাফিয়ে ঘুম থেকে উঠলো।
কেননা জয়নাল স্বপ্ন দেখছে ক্ষুধার জ্বালায় তার সন্তানরা আদরের ধনরা ছটপট করছে।অথচ সে পিতা হয়ে কিছুই করতে পারছে না।
সেই স্বপ্ন দেখে অসহায় বাবা জয়নাল ঘর থেকে বের হয়ে। তাদের বাড়ির পাশে আম গাছটির ডালে গলায় দড়ি দিয়ে ঝুলে পড়লো।
এইভাবে অসহায় বাবা জয়নাল ফাঁসি নিয়ে মৃত্যুবরণ করলো।
ভোর হতেই তার স্ত্রী সন্তানদের আহাজারি।
গল্পের শেষে বলা যায়,
রাক্ষস করোনার চেয়ে ক্ষুধার জ্বালা অনেক বেশি ভয়ংকর। যা কেউ সহ্য করতে পারে না।
অসহায় বাবা জয়নাল হয়তো ফাঁসি নিয়ে মুক্তি পেলো।
এখন তার পরিবারের কি হবে?
তার কোনো উত্তর জানা নাই আমাদের কারো।
লেখকঃ শামীমা আক্তার সাথী
কবি ও গল্পকার।
0 Comments