Advertisement

উন্মেষ

অনুবাদ গল্প : কাঠের মানুষ

উন্মেষ



স্নান করার সময় মাথাটা কেমন যেন ঘুরে উঠল। তখন আমি তাকে আমার ডেকে পাঠানোর কথাটা মনে ড়েবাথরুমেররজা আজকাল আমরা আবজে রাখি তাই ইনি ভেতরে চলে এলেন বং আমাকে পড়ে যেতে না  দিয়ে তুলে ধরে রঘুর নাম ধরে  চিৎকার করে ডাকলেনতারে  র কিছুই মনে পড়ে না।

যখন আমার জ্ঞান ফিরে এল, তখন আমি নার্সিং হোমের বিছানায় পরে ইনি বললেন যে দুদিন আমি নাকি চোখ খুলে তাকাইনি এবং এদের খুবই চিন্তায় ফেলে দিয়েছিলাম। আমার কি হয়েছিল জিজ্ঞেস করায় ইনি বললেন যে আমার মাইল্ড স্ট্রোক য়েছিল, শ্য শরীরে এর কোনো  বাহ্যিক প্রভাৱ পড়ে নি এবং এখন আর চিন্তারও কোনো কারণ নেই। কিছুদিন রেস্টে থাকলে আর ডাক্তারের পরামর্শ মতো খাওয়া দাওয়া করলে কিছুদিনের মধ্যেই আবার একেবারে আগের মতো ফিট হয়ে যাব।

নার্সিং  হোম থেকে ছুটি দেবার পরে আমি কিছুদিন বাড়িতেই রইলাম শরীর সুস্থ হওয়ার পরে আমি নতুন করে তৈরি তিনতলা  বাড়িটা দেখতে যাবার কথা ভাবলাম। তবে আমাদের এখানকার বাড়িটাও তিনতলাই নিচে আমরা থাকি, ফার্ষ্ট ফ্লোরে ছেলে-ছেলের বৌ সেকেণ্ড ফ্লোরটা এমনিই পড়ে আছে। আমাদের কিছুকিছু জিনিস রাখা আছে আর  কখন ও কোনো অতিথি এলে থাকে। এই ঘরটাও বেশ বড় সড়, মহানগরের  ভেতরে এই ধরনের এত বিশাল সীমানা নিয়ে বাড়ি  নেইই। তথাপি শ্রীমতী সিদ্ধান্ত নিল আর আমিও চিন্তা করে দেখলাম যে  মহানগরে  রও  দুবিঘা জমি কিনে রাখা আছে যখন সেখানে বাড়ি একটা তৈ্রি করলে খুব একটা খারাপ হবে ন। চাকরি থাকা অবস্থায় কিছ খাতিথাকে এবং জিনিস-পত্র, টাকা-পয়সা যোগারাও সহজ হয়। তাই আমার  চাকরি থাকা অবস্থাতেই বাড়িটা তৈরি করে ফেললাম বাড়ি প্রায় সম্পূর্ণ হয়ে এসেছে, ফিনিসিং টাচ দেওয়ার কাজ চলছেনতুন বাড়িটা একবার দেখে আসি বলায় ছেলে বলল যে ডাক্তার যেহেতু  তিন সপ্তাহ কমপ্লিট রেস্টের কথা বলেছেন এবং সেই সময়টা পাতে আর মাত্র তিন দিন বাকি, তাই এই কয়েকদিন বাইরে না যাওয়াই ভালোরে আমার কিছু হলে লে ওদেরই দৌড়াদৌড়ি করতে হবে,কষ্ট হবে আমি  অগত্যা ওদের কথাতেই সায় দিলাম

বাড়িতে থাকা মানে শুয়ে-বসে কাটানোদুপুরের খাবার খেয়ে আমি বাড়ির সামনের পোর্টিকোর মতো  থাকা জায়গাটিতে রাচেয়ারে বসে কিছুক্ষণ রাম করি বাড়িতে সাধাণত আমি, শ্রীমতী  এবং কাজের লোক থাকে। দুপুরের ভাখেয়ে সবাই বিশ্রাম নেয় আমি একাই বাইরে বসে থাকি।

সেদিনআমি সেভাবেই দুপুরের খাওয়া সেরে বাইরে বসেছিলামন্ধের দিন বলে আমার ব্যবসায়ী ছেলে এবং ছেলের বৌ ও বাড়িতেই ছিল। তাহলেও ওরা ওপর তলায় নিজের ঘরের ভেতরে  ছিল। ... হঠাৎ আমি দেখতে পেলাম -আমাদের বাড়ির  গেটের কাছে একজন মানুষগেট খুলতে গিয়ে কিছু টা যেন চিন্তা কছে। তারপর  বাইরে বসে থাকা আমার দিকে তাকাল এবং গেট খুলে ভেতরে চলে এল

আমি মানুষটার দিকে তাকালাম তার পরনে  টা পুরনো কালো পেন্ট, ধোয়া বর্ণের মলিন জামা, পায়ে রং চটে যাওয়া স্যাণ্ডেল,আধ পাকা চুল, মুখেও আধ পাকা মোচমানুষটাকে দেখেই আমার বড় পরিচিত মনে হতে লাগল, বার অপরিচিত বলেও মনে হল। মানে চেহারাটা কিছুটা পরিচিত  হলেও তিনি কে তা বুঝতে পারছিলাম না; অৱশ্য তিনি নিজে পরিচয় দিলে হয়তো মনে  পড়ে যাবে

মানুষটা হনহন করে আমার দিকেই এগিয়ে এলেন এবং আমি কিছুই না বলা সত্ত্বেও আমার চেয়ারের কাছে থাকা খালি চেয়ারে বসলেন আমার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলেন –‘এখন ভালো আছ তো?

খনলছেন যখন আমার যে কিছুদিন আগে শরীর খারাপ করেছিল তা তিনি জানেন। ... আ তুমিলছেন যখন আমার আত্মীয়... নাহলে, বন্ধুস্থানীয় কেউ  বেনঅফিসে আমার যে পদ মর্যাদা এবং যা  ধন-সম্পত্তি রয়েছে সেই হিসাবে আমাকে তুমি বলে ডাকার মতো মানুষ  ই। আমি বললাম, ভালো, ভালো! মানে এখন একেবারেই ভালো। ... তবে তোমাকে আমি ঠিক চিনতে আরছি না

পরিচিত বলে মনে হচ্ছে তো? মানুষটা মুচকি হেসে জিজ্ঞেস করলেন।

হ্যাঁ,হ্যাঁ ,আমি বললাম

এতেই হবে তবে আমি এখনই আমি কে বা আমার নাম কি বলব না। মনে করতে চেষ্টা ক,’ তিনি বললেন

চেষ্টা করবতথাপি নামটা বলে দিলে ডাকতে সুবিধা  হয়,আমি বললাম

সেইযে ...  স্কুলে হাজরিকা স্যার আমাদের  এলজেব্রা শেখানোর সময় অজ্ঞাত রাশি বললেই এক্স, য়াই, জেরে নেবার কথা বলা হত না? সেরকমই কিছু একটা ধরে নাও। হেঃ হেঃ হেঃ মানুষটা হালকা সুরে বললেন।

তিনি হাজরিকা স্যারের  কথা জানেন। তারমানে নিশ্চয় আমার স্কুলের  বন্ধু। আমিই বুঝতে পারছিনা

এক্স, ওয়াই রে নিতে অসুবিধা হচ্ছে? ঠিক আছে, নাম ধরেই ডাক কী নামে  ডাকবে? কিছু একটা বলে ডাক - বিবেক ... বা অবিনাশতিনি বললেন

আমি বেশ বেকায়দায় পড়লাম।  ঠিক  আছে, নাহয় বন্ধুই হল। কিন্তু কী  মতলবে  এতদিন পরে এসেছে? সাহায্য চেয়ে বা টাকা ধার চাইতে  নয় তো! সেটাই বেভাবে শুধু খবর নিতে আর কে আসে?  

আমি তাকে এমনিতেই জিজ্ঞেস করলাম, চা খাবে নাকি?

না না, লাগবে না, বিবেক বা অবিনাশ লেন, ভাবে বসে কথা বলতেই ভালো লাগছে।

আমি এবা প্রায় নিশ্চিতই হলাম - টাকাই চাইবে তার পোশাক পরিচ্ছদ  খুব সুবিধা নয়। গাড়িতে আসতে দেখিনি, হেঁটেই আসছে বলে মনে হচ্ছে তাই অভা আছে। তবে চাইলেও আমি টাকা দেব নাইয়ার্কি নাকি? হাত পাতলেই টাকা দেবার জন্য আমি দাতব্য প্রতিষ্ঠান পেতে রেখেছি নাকি? র সাহায্য  যদি করতেই হয়, অন্যদের বলুক, আমাকে নয়।

তিনি অবশ্য তথনই টাকা কথা বললেন না, পুরোনো প্রসঙ্গ উত্থাপন করলেন, হাজরিকা স্যারের  কথা বলায় নে  ছে। তুমি কিন্তু অংকে বেশ মেধাবী ছিলেবার তুমি  তো  হাজরিকা স্যার করতে না পারা একটা  অংক ব্ল্যকবোর্ডে করে দিয়েছিলে।

হাঃ হাঃ হাঃতোমা তামানে মনে আছে? আমি প্রফুল্ল ভাবেই বললাম

কেন থাকবে না?কবার যে শইকীয়া স্যার আমার  জীবনের  লক্ষ্য রচনা  লিখতে বলায় তুমি ভারতের  প্রধানমন্ত্রী হওয়ার  কথা লিখেছিলে ! আমরা বুঝতে পারিনি,তবে তুমি তখনই  মুদ্রাস্ফীতি,  অর্থনৈতিক উন্নয়ণ ইত্যাদির কথা বলেছিলে, ভারতকে  উন্নত দেশের সারিতে দাঁড় করানোর কথা বলেছিলে,  দুর্নীতিমুক্ত দেশের  ক্ষেত্রে ভাকে  বিশ্বের  এক নম্ব দেশ করব বলেছিলে আগন্তুক বললেন

আঃ সেইসব কথা এখন আর কেন উত্থাপন করছেন?’ একথা বললেও আমার বেশ  ভালোই লাগল।

কেন বলব না? শইকীয়া স্যার  সেই চনা সবাইকে  ড়ে শুনিয়ে বলেছিলেন - তোরা দেখিস,ভৱিষ্যতে অনেক  ভালো  কারবে  যে ক্ষেত্রে  ইচ্ছা করবে, সেই ক্ষেত্রেই নাম করতে পারবে। ...তবে আমি অনেকদিন কার ও কোনো খবরা খবর রাখিনিখন তুমি কোন ক্ষেত্রে  নাম করেছ, আমি জানি না

কোনো ক্ষেত্রেই নয় আমি একটু ভেবে বললাম।

কিন্তু শইকীয়া স্যারের কথা কখন ও মিথ্যা হতে পারে না , তুমি কোনো একটি ক্ষেত্রে নিশ্চয়  নাম করেছ। ... সেটা কী বলতো ?

কে জানে কী?’ আমি আবার চিন্তায় পড়লামতারপরে  ইতস্তত করে বললাম , অন্য কিছু না হলেও ধন-সম্পত্তি অর্জনে নাকি?’

বাঁকা পথ পথদিয়ে  হলে, সেটা তো আর নাম হল না, বদনাম হল’ তিনি বললেন

আমি মনে মনে  রইলাম

আগে তুমি আমাদের সঙ্গীদের ছাড়া অন্যদেরও কত সাহায্য করতে মনে  আছে? আমাদের গ্রামের  কুশল দাইতির যে টি বি হয়েছিল, তখন গ্রামের অন্যদের গা ছাড়া  মনোভাৱ দেখে  তোমার কত রাগ হয়েছিল ! তুমি একাই তাদের সাহায্য করার জন্য এগিয়ে গিয়েছিলে। তাঁকে সরকারি হাসপাতালে  ভর্তি করিয়ে দিয়েছিলে , তুমি টিউশুনি করে পাওয়া  সামান্য টাকাটুকুও তাঁদের পরিবারকে দিয়ে দিয়েছিলে!’  বিবেক নামের মানুষটা বললেন।

সেটা তো কর্তব্য ছিল। রক্তের সম্পর্ক নাথাকলেও একই গ্রামের মানুষ যখন আমরা  আত্মীয় নয় কি? অন্যেরা বুঝুক না বুঝুক  আমাদের তো বুঝতে হবেআমার মনটা  যেন সেই পুরোনো  দিনগুলিতে চলে গেল

খনহয়তো তুমি অভাবী বা সমস্যায় জর্জরিত  কত মানুষকে সেভাবে সাহায্য করে চলেছ?তিনি বললেন।

আমি? সাহায্য করছি?’ আমি যেন আকাশ থেকে পড়লাম। তারপরে কিছুটা ভেবে বললাম, ‘নাহে ! আমি কাউকে সেভাবে সাহায্য করতে পারিনি ... মানে মনে কর, ইঞ্জিনিয়াৰিং পড়লামতারে চাকরিতে ঢুকলামবিয়ে করলাম সংসারলাম নিজেরেই কত সমস্যা ছিল! ভাল ঘর নেই, গাড়ি নেই, টাকা নেই। সেইসমস্ত  সমাধান করায় ব্যস্ত হয়ে পড়লাম। ... মানে অন্যকে সাহায্য করার জন্য   ...

কিন্তু গেও তো  তোমার, মানে তোমাদের অনেক সমস্যা ছিল। সেইসব তো বাদেই, তোমাদের ঘরটা ছিল ছোট, মানুষ বেশি। তোমাদের বাড়িতে  তো লাইটের  কানেকশনো ছিলনা।  একটা ভালো লেম্প ছিল , তার দ্বারা তোমরা চারজন ছেলে-মেয়ে পড়াশোনা করতে !তিনি বললেন।

এইমানুষটা এত কথা কীভাবে জানল? না, জানতেও পারে। তখনকার সময়ে গ্রামের একে অপরের সাধারণ  কথাগুলিও জানত। কারও লুকোনোর কিছু ছিল না।

বুঝেছ,তখন  ঘর-বাড়ি ছোট হলেও তখন তোমার মনটা বড় ছিল। পরে তোমার ঘর-বাড়ি  বড়  হলেও মনটা ছোট হয়ে গেল। য়কি?’ তিনি বললেন।

না, না,’আমি প্রতিবাদ করে বললাম, মানে দেখ, বাড়ির কত কাজ! শ্রীমতীর সুখ-শান্তির কথা ভেবে দেখতে হবে , ছেলে-মেয়েদের  সুবিধা-অসুবিধার কথা ভাবতে হবে। ... আর ধর, শালা-শালি বা শ্বশুর বাড়িকে ও দেখতে হয়, তাঁদের ‌সমস্যাগুলির প্রতি খেয়াল রাখতে হয়। অফিসের কাজও রয়েছে, দায়িত্ব আছে। আর ...ও। নিজের দাদা ভাইয়ের  পরিবারেও কখনও সমস্যা হলে  ...। আসলে বাধ্য হয়ে পড়েছি,বুঝেছ?

না বুঝিনি,’ মানুষটা সোজাসুজি বললেন, ‘কে কাকে  বাধ্য করতে পারে? তুমি নিজেকে জিজ্ঞেস কর - তুমি নিজে বাধ্য নাহলে কেউ তোমাকে বাধ্য করতে পারত? ... নে আছে, তুমি যে আগে আমাদের বলেছিলে - মানুষকে মাটিতে মিশিয়ে দিতে পারি, কিন্তু বাধ্য করতে পারি না' খন সেই তুমি বাধ্য কেন হবে?

আমার, মানে আমাদের  যে অনেক জিনিস লাগে!আমি রুণভাবে লাম

মিথ্যা কথা। কেল তোমা নয়, কারও সলে কিছুই চাই নাটা আমার কথা নয়। এসময়ে তুমিই বলেছিলেশইকীয়া স্যারের আদর্শে উদ্বুব্ধ হয়ে তুমি আমাদের বলেছিলে না যে মানুষের অপার্থিৱ সম্পদ অনেক চাই, কিন্তু জিনিস চাই খুবই সামান্য। মাত্র ছহাত মাটি!

বলেছিলাম নাকি!’ আমি বার ইতস্তত করে বললাম

তুমি কিন্তু আগে খুব ভালো ছাত্র ছিলে। ... এবং পড়াশোনাও অনেক করতে। তুমি এমন কিছু বই পড়েছিলে, যাদের আমরা নামই শুনিনি। তোমার কোনো অহংকারও ছিল না। তুমি পড়তে ভালোবাসা বইয়ের  কিছু পঙক্তি আমাদের কাছেও বলতে। তুমি হেমিংওয়ের লেখা মেন কেন বি ডেষ্ট্রয়েড, বাট নট ডিফীটেডলাইনটা আমার  এখনও মনে আছে। ... আর তুমি অস্ত্রভয়স্কী না কে যেন লেখা লাইন এটাও প্রায়ই বলতে আমি খন ভুলে গেছি...

জীটাখন দুর্বিহ হয়ে উঠে, খন বেঁচে থাকতে শেখ! হঠাৎ আমারনেড়ে গেল।

হ্যাঁ,হ্যাঁ, সেই সারিটা, তিনি বে উত্সাহিত হয়ে বলেন, র তুমি কিন্তু কবিতারও বেশ রসিক ছিলে! তুমি প্রায়ই আমাদের কিছু কবিতার সারি শোনাতে। তোমার নিজের লেখা না  অন্যের লেখা জানিনা, কিন্তু কিছু পঙক্তি আমার এখনও মনে আছে,’ তিনি বললেন।

কী ছিল পঙক্তি গুলি?’ আমি জিজ্ঞেস করলাম।

মনে করুন ...   ফুল নিয়ে মানুষ খুব বেশি মিথ্যা কথা বলে তাই আমি ফুলকে মোটেসহ্য করতে পারিনা, তারচেয়ে আমি ভালোবাসি আগুনের স্ফুলিঙ্গ; তাদিয়ে তো আ মুখোস তৈরি করা যায় না! ... আরও একটি পঙক্তি শোন - বুকের বাঁদিকের পকেটটা খুঁজে খুঁজে সেই মানুষটা তার জীটা কাটিয়ে দিল; অথচ তা কিছু নিচে হাত দিলেই তিনি পেয়ে যেতেন আলাদিনের আশ্চর্য্য প্রদীপ - আর হৃদয়!

হ্যাঁ,হ্যাঁ, আমার নেড়েছে,’ আমার ত্যিসত্যিই নেড়ে গেল।

তুমি যে আমাদের স্কুলের হাতে লেখা ম্যাগাজিনে কাঠের চেয়ার নামেরটা বাংলা কবিতা অনুবাদ করেছিলে, নে আছে কি?’ তিনি জিজ্ঞেস করলেন

অনুবাদ করার কথা তো নেড়েছে, কী অনুবাদ করেছিলাম, আমার সেটাও মনেড়ে গেল। আমি বলে উঠলাম কাঠের  চেয়ারে সে থাকতে থাকতে মানুদিন কাঠ হয়ে যায়; ... তখন তাকে যদি কেউ  ড় মেরে চলে যায়, তার রাগ হয় না; সমর্পণের ভাবে নারী এসে পাশে দাঁড়ায়, সে কেঁপে উঠে না; নড়বড় পায়ে শিশু দৌড়ে এগিয়ে আসে , সে দুহাত এগিয়ে দে না ...

বিবেক না অবিনাশও বলে  গে, কটুকরো কাঠের ওপরে আরও ক টুকরো কাঠ জোড়া লেগে লেগে  সে  এখন এমন একটি কাঠের চেয়ার, যারীরের  সন্ধিতে কেল মরচে পড়া গজালের গান; ঘু ঘু ঘূণ পোকার গান; ড়াত বাটালিএকঘেয়েমি গান; ... কাঠের অশ্রু নে, স্বপ্ন নে, নিদ্রা নে, হাহাকার নেই!

হ্যাঁ,হ্যাঁ! কিছু টা উপলব্ধি থেকে  আমি বলে ফেললাম, আমিওখন সেই কাঠের চেয়ার ছাড়া আর কিছু কটা সময়ে আমার  দুই চোখ ছিল - দূষিত সমাজটা রিবর্তন করার স্বপ্ন ছিল - দরিদ্র মানুষের জন্য কারার প্রবল ইচ্ছা, দেহে টগবগ করত - উষ্ণ রক্তকিন্তু এখন? খন  আম অনুভূতিবিহীন এক টুকরো  কাঠ।

দাঁড়াও, সেন্টিমেন্টালও না,’ তিনি বলেন, কবিতা কথা উঠেছে যখন সে কথাই বলি। ... তুমি আরও  কটি সুন্দর কবিতা শুনিয়েছিলেপ্রেমের কবিতাই বোধহয়ভালো রে বুঝতে  নাপালেও আমার খুব ভালো লেগেছিল। বলব কি?

বল বল, আমি বলাম

আমিকটি আপেলের আধাটুকরো, বাকি আধা এই বিশাল পৃথিবী; আমিটি আপেলের আধাটুকরো; বাকি আধা অগণিত মানু; আমিটি আপেলের আধাটুকরো, বাকি আধা তুমি; আমি এবং তুমি!

ার আবেশই নকি, আমার মুখ দিয়েও ভুল-শুদ্ধ বেরিয়ে , হে মহাজী, আজ আর  কাব্য নয়, এবা কঠো কঠিন গদ্য আনো; পদ-লালিত্য-ঝংকাসব মুছে যাক, গদ্যে কড়া হাতুড়ি আজ হানো; ক্ষুধার রাজ্যে  পৃথিবী গদ্যময়, পূর্ণিমা চাঁদ যেন ঝলসানো রুটি।

এইতো!বিবেক না অবিনাশ উচ্ছ্বসিত হয়ে উঠল, কে বলে - তোমানের সেই ভাব হারিয়ে গেছে? ধূসয়ে যেতে পারে, অস্পষ্ট হতে পারে, কিন্তু হারিয়ে যায়য় নিতা প্রমাণ পেলে? ... সলে  কোনো জিনিসই হারিয়ে যায়না, বুঝেছ। ভালোবাসা, আবেগ, সুচিন্তা, যাই বল - কিছুই হারিয়ে যায়নাকারও চোখের অন্তরালে লুকিয়ে থাকে। তুমি দেখতে পেলেনা লেতা  হারিয়ে গেছে কি? কেন, আমরাগে মাঠে ক্রিকেট খেলার সময় হারিয়ে  যাওয়া  লে ভাবা বলটাখনও  বার পেয়ে যাইনা কি?

সেটা ঠিক। ... কিন্তু তুমি কিছুই হারিয়ে যায়নালাথাটা সত্যি কি?’ আই কিছুটা দ্বিধা নিয়েই জিজ্ঞেস করলাম

একেবারে সত্যি তবে খুঁজে পাবার জন্য প্রয়োজনীয় চেষ্টা করতে হবে,’ তিনি বললেনতারপরে  হঠাৎ উঠে দাঁড়িয়ে, সেই মুহূর্তে আমার প্রিয় হয়ে উঠা বিবেক না অবিনাশ বল, আমিখন যা বুঝেছ।

ইস, তুমি যা বললেই হবে নাকি? পুরোনো বন্ধু এজন, এতদিন পরে কাছে পেয়েছি! কেন যাবে তুমি?আমি একেবারে ব্যতিব্যস্ত হয়ে  উঠলাম, তাছাড়া তুমি দেখছি রে বলব লেখনও তোমাল নামটাই বলনি। ... এই যে, তুমি সত্যি সত্যিই চলে যাচ্ছ দেখছি? আমাকে ই অবস্থায় ফেলে চলে যাচ্ছ কেন তুমি? আরে ... আরে!’ আমি  আতুভাবে চিৎকার করে উঠলাম

আমার চিৎকার শুনেনাকি, রের ভের থেকে শ্রীমতী বেরিয়ে এল। অন্যদিক থেকে দৌড়ে এঘু।

শ্রীমতী আমার গায়ে হাত দিয়ে বলে উঠল, কী হল? তুমি এভাবে চিৎকার করছ কেন?

কেন চিৎকার করব না হে!’ আমিড়গড় করে উঠলাম, আমার এত ভালো, পুরোনো  জন বন্ধু এসে এত কথা বলে কাপ চা না খেয়ে হঠাৎ ঠে চলে গেছে! আমি  তোমাদের সঙ্গে পরিচয় রিয়েও দিতে পারলাম  না। ... এই রঘু, তুদেখতো , মানুষটা গেট পায়ে বেশি দূর যেতে পারেনি বলে মনে হচ্ছে , তুই দৌড়ে গিয়ে  ওকে ডেকে নিয়ে আয়

কোন মানু?’ রঘু জিজ্ঞেস করল

আরে! এই চেয়ারটাতে সে আমার সঙ্গে এতক্ষণ কথা বলছিল যে?’ আমার রাগঠে গেল।

কে এসেছিল রে রঘু? শ্রীমতী তাকে জিজ্ঞেস করল।

আমি তো কাউকে দেখিনি আমিঃ কিছুক্ষণ গে এসে দেখি স্যার এখানে বসে দুই চোখ বুজে   বিবি রে কিছু বলছেন আমি কিছু না বলে ওপাশে গিয়ে কাছিলাম।

শ্রীমতী আমাকে বল, শুনলেএই বয়সে খনও  ইলিউন হতে পারেলে ডাক্তারবশ্য বলেছিলেন

আামি চিৎকার করে উঠলাম, ডাক্তার এমনিবলেছে। মানুষটার আসাটা একেবারেত্যিআমরা এতক্ষণ ধরে কথা বললাম ! পুরোনো কথাও কত উঠল! এদিকে মন না দিয়ে কেউ আসেনি বললেই  বে নাকি?

শ্রীমতী কিছু না বলে আমাকেরে  ঠিয়ে ভেরে নিয়ে গেল। পর্টিকোতেসিয়ে দিয়ে বল, তুমি এখানে   আমি চায়ের ব্যস্থা করছি, একসঙ্গে খা

আমি সেখানে সে রইলাম এবং কথাগুলি চিন্তা করতে লালাম

না, তেপারে নাবিবেক না অবিনাশকে কেউ দেখতে পায়নি লেতার আসাটা মিথ্যা হয়ে যেতে পারে না। সে যে এসেছিল, সেটা  একেবারে নিশ্চিত। তাঁর কথাগুলি আমার কানে বাজছে তাঁর রঙ চটে যাওয়া চামড়ার স্যাণ্ডেল, পুরোনো কালো  পেন্ট, ধোঁয়া  র্ণের মলিন শার্ট,  মুখের আধা পাকা মোচ - আমার স্পষ্ট মনে আছে! এখনআমি তাকে দেখলেই চিনতে  পারব

... ইলিউন যদি হয়েই থাকে আমার নয়। এই বদমাস রঘুর এবং ... আ হয়তো এরও !


লেখক পরিচিতিঃ পেশায় ইঞ্জিনিয়ার অভিজিৎ শর্মা বরুয়া ৮ ডিসেম্বর ১৯৬১ সনে জন্মগ্রহণ করেন।বর্তমানে বিজ্ঞান জেউতি পত্রিকার সম্পাদক শ্রী বরুয়া সাহিত্যের প্রায় প্রতিটি বিভাগেই নিজ প্রতিভার পরিচয় দিয়েছেন।তিনি  একই সঙ্গে ছোট গল্পকার,ঔপন্যাসিক,শিশুসাহিত্যিক, অনুবাদক, জীবনী সাহিত্য লেখক এবং বিভিন্ন পত্র পত্রিকা এবং গ্রন্থ সম্পাদনার সঙ্গে জড়িত। প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা ৯৬। বিজ্ঞানকে শিশু এবং কিশোর সমাজে জনপ্রিয় করে তোলার জন্য জাতীয় পুরস্কারে সম্মা্নিত হন। ভারতের বিভিন্ন ভাষায় তাঁর লেখা অনূদিত হয়ে প্রশংসিত হয়েছে। 

ভাষান্তরঃ বাসুদেব দাস, ভারত।

Post a Comment

0 Comments