Advertisement

উন্মেষ

বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীঃ পৃথিবীয়া

unmesh_science fiction
প্রচ্ছদঃ উন্মেষ ও ইন্টারনেট

লক্ষ্য লক্ষ্য আলোক বর্ষ দূরের সেই নক্ষত্রগুলো থেকে আসা আলো এই সুবিশাল আকাশে অনেক আশ্চর্য দেখাচ্ছে। আজকের রাতে আকাশ একটু অন্যরকম লাগছে। সুবিশাল মরুভূমির মতো দেখতে এই জায়গায় দাঁড়িয়ে যতদূর চোখ যায়, ততদূর ধ্বংসাবশেষ এর কোন চিহ্নও নাই। আজকে দুই চাঁদ একসাথে ওঠায় চারদিকে সবকিছু পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে। আবহাওয়া মৃদু ঠান্ডা। প্রায় দেড় হাজার বছর আগে পৃথিবীয়া নামক এই গ্রহের নতুন করে জন্ম হয়। তার আগে এর নাম ছিলো পৃথিবী। প্রায় দেড় হাজার বছর আগে বুদ্ধিমান মানুষের নেওয়া ভুল পদক্ষেপের জন্য পৃথিবীর ভৌগলিক গঠন বদলে গেছে। পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত হয়ে গেছে বহু প্রজাতির প্রানী। আর এই বিলুপ্ত প্রানীর মধ্যে মানুষও আছে। তবে সীমিত সংখ্যক সদস্যের একটা মানুষের ক্লান এখনো বেঁচে আছে যেসব মানুষ বেঁচে আছে, তারা প্রতিনিয়ত বেঁচে থাকার সংগ্রাম চালাচ্ছে। কারণ এই পৃথিবীয়া নামক গ্রহে এমন কিছু প্রানী রাজত্ব করছে যারা মানুষের দ্বারা সৃষ্টি হয়েছে কিন্তু মানুষ জাতির বিলুপ্ত হওয়ার জন্য তারা দ্বায়ী। ওরা এখনো মানুষকে নিজের শত্রু মনে করে। আবির এই মরুপ্রান্তে দাঁড়িয়ে সেই সুবিশাল আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। তার মুখে এক আশ্চর্য রকমের ভাব ফুটে উঠেছে। আবির দেখতে খারাপ না। কালো পলিমারের ড্রেসে তাকে ভালোই মানিয়েছে। পাশে দাঁড়িয়ে থাকা জেরিন আপন মনে নিজের অস্ত্র ঠিক করছে। জেরিনের গড়ন অনেক সুন্দর। জেরিন আর আবির অনেক ভালো বন্ধু।

আবির....
‘’জেরিন দেখ, আজকে চাঁদের দুই অংশ একসাথে আকাশে উঠার কারণে এক অভাবনীয় দৃশ্যের সৃষ্টি হয়েছে’’।

জেরিন...."হুম। ১৫০০ বছর আগে যদি চাঁদে সেই বিশাল লেজার বিস্ফোরণ না ঘটানো হত,তাহলে আজকে এই চাঁদের দুই অংশ দেখতে হত না। এদের কক্ষপথ আলাদা হওয়ার কারণে এদের অবস্থান ভিন্ন ভিন্ন। তাই প্রতি রাতে দুই চাঁদ একসাথে দেখা যায় না।"

আবির....." তবে আজকে দুই চাঁদ একসাথে উঠেছে। আমাদের ভাগ্য ভালো বলতে হয়..."

জেরিন....." দেড় হাজার বছর আগে চাঁদের সাথে সাথে আমাদের ভাগ্যও দুইভাগে ভাগ করে দিয়েছে ওই মানরিসা জাতি।  তাদের জন্যই আজ আমরা এতো কষ্ট করে বাঁচতে হচ্ছে।"

আবির....." দেড় হাজার বছর আগে আমাদের পূর্বের জাতি যদি তাদের সৃষ্টি না করত,তাহলে আর এতো কিছু হত না। তারা যে দেখতে ঠিক আমাদের মতো। তবে তাদের উচ্চতা আমাদের থেকে কিছুটা বেশি। গায়ের রং হালকা বাদামী। চোখের মনি চারটি যেখানে আমরা মানুষদের আছে দুটি করে। তাই তাদের দৃষ্টিশক্তি প্রখর।"

জেরিন... "মানুষ তো তাদের সৃষ্টি করেছিলো দূর মহাকাশে পাঠানোর জন্য। কারণ মানুষের জন্য তা ছিলো বিপদজ্জনক। তাইতো মানুষ এই মানরিসা জাতি সৃষ্টি করেছিলো যাদের দৃষ্টি তীক্ষ্ণতা আর সহ্যশক্তি অনেক বেশি।"

কিছু দূরেই তাদের ক্লানের প্রধান দলপতি লড ক্লাম্বডিয়া তাদের বিশাল স্থলযানের পাশে রাখা যন্ত্রপাতির বাক্সের উপর বসে থেকে গভির চিন্তায় মগ্ন আছেন। তিনি এই ক্লানের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বয়স্ক মানুষ। কিন্তু তার চাঞ্চল্যতা এখনো অনেক বেশি। তাদের ক্লানে প্রায় ৫০ জনের মত সদস্য রয়েছে। খাবারের জন্য তারা সবাই একস্থান থেকে আরেক স্থানে বিশাল দলবেধে যাতায়াত করে। প্রতিরক্ষার জন্য তাদের কাছে আছে হাইড্রোজেন গান থেকে শুরু করে লেজার গান পর্যন্ত। কিন্তু তাদের কাছে পাঁচ মাত্রার অস্ত্র হলো সর্বচ্চো শক্তিশালী অস্ত্র। এর থেকে শক্তিশালী অস্ত্র তাদের কাছে নেই। তারা এখন এই মরুভূমির উপর দিয়ে সোজা পশ্চিমের দিকে যাচ্ছে। কিন্তু রাত হওয়াতে তাদের সকল ট্রাকের মতো দেখতে বিশাল বিশাল যানবহনগুলো একপাশে রেখে দিয়েছে।এগুলো অনেক শক্তিশালী এঞ্জিন দ্বারা চলে। দেখতে বিকট। এগুলো মুলত খাদ্য বহন ছাড়াও তাদের বিভিন্ন নিত্যপ্রয়োজনীয় পন্য নিয়ে যাওয়ার কাজে ব্যবহৃত হয়।

প্রায় সকাল হয়ে গেছে। ক্লানে আগেই অন্যত্র যাওয়ার প্রস্তুতি চলছে। সবাই যে যার কাজে ব্যস্ত। আবির,জেরিন,রাহি,মারিনা আর রিসি একই যানে আছে। তারা সবাই যুবক। তাই এদের মধ্যে একটু বেশিই চাঞ্চল্যতা দেখা যায়। এদের মধ্যে আবির একটু গম্ভীর প্রকৃতির। তবে তার সৃজনশীলতা অসাধারণ। জেরিনের অস্ত্রপাতি সম্পর্কে অনেক ভালো ধারনা আছে। রাহি একটু বেশি কথা বলে। তবে সে যে কারও সাথে অনেক তাড়াতাড়ি বন্ধুত্ব গড়ে তুলতে পারে। আর অন্যদিকে রিসি সারাদিন নেটওয়ার্ক সিস্টেম নিয়ে আগ্রহ দেখায়। বলতে গেলে এগূলো সম্পর্কে প্রচুর জ্ঞান অর্জন করেছে। আর মারিনা হলো চশমা পড়া বুদ্ধিমতী মেয়ে।

এরা সবাই জানে যে যতদিন তারা মানরিসা জাতিকে শেষ করতে পারবে না, ততদিন তাদের এইভাবে যাযাবরদের মতো জীবন সংগ্রাম চালিয়ে যেতে হবে। কিন্তু তারা কিছু উপায়ও দেখছে না। কারন পৃথিবীয়াতে এখন যে সব শক্তিশালি অস্ত্রপাতি আছে, সবই এখন প্রায় মানরিসাদের হাতে।

তারা গতিশীল অবস্থাতেই দূর থেক আলো দেখতে পেলো। পুরো ক্লানের মধ্যে একটা একটা আতংক ভাব ফুটে উঠলো। এরা মানরিসা হতে পারে যারা হয়তো তাদের ধরার জন্য অপেক্ষা করছে। লড ক্লাম্বডিয়া সবাইকে শান্ত থাকতে বলে এবং অস্ত্র প্রস্তুত রাখতে বলে।আবির সহ তার সব বন্ধুরা প্রস্তুত। তাদের শক্তিশালী ইঞ্চিন সম্পূর্ণ যানটি যত আলোর কাছে যেতে লাগলো ততই একটা জিনিস পরিষ্কার হতে লাগলো যে এটা কোন মানরিসার ঘাটি নয়। এখানে আগে মানুষের ক্লান থাকতো। তবে তাদের চিহ্ন এখানে আর নেই। তারা তাদের সকল যান থামিয়ে পুরো ধ্বংসস্তূপ ভালো করে পর্যবেক্ষণ করতে লাগলো। এখানে সেখানে অনেক যন্ত্রপাতি রাখা। আবির আর জেরিন একটা বিশাল ঘরের মধ্যে ঢুকলো। পরক্ষনেই বুঝতে পারলো যে এটা একটা বিজ্ঞানের লাইব্রেরী। এখানে সেখানে অনেক ফাইল ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। তারমধ্যে আবির একটা ফাইল খুজে বের করে পরতে লাগলো এবং হঠ্যাৎ সে চমকে উঠলো। সাথে সাথে সে রাহি, মারিয়া এবং আর রিসিকে ডেকে পাঠালো। তারা সবাই দেখলো যে বইয়ে মানরিসা জাতির দুর্বলতা জানানো হয়েছে। এই ফাইলটি তৈরি করেছে বিজ্ঞানী আলফা দেড় হাজার বছর আগে। রাহি এটা দেখে চিৎকার করে উঠলো এবং লর্ড ক্লাম্বডিয়াকে দেখাতে চাইলো। কিন্তু আবির তাতে রাজি হল না।

সে বলল.... "এই প্রস্তাবে লোর্ড কখোনই রাজি হবে না। তিনি মানরিসা জাতি থেকে সর্বদা দূরে থাকতে চেয়েছেন।"

রাহি..." কেন???"

আবির...."কারন ওরা এখন এই পৃথিবীয়ার সবচেয়ে শক্তিশালী প্রানী।"
জেরিন..." তাহলে আমাদের কি করা উচিত?"
আবির...."আমি নিজেও জানি না।"
রিসি.... "আচ্ছা,আমরা নিজেরাই কিছু সিদ্ধান্ত নেই যেটা আমরা কয়েকজন ছাড়া ক্লানের অন্য কোন সদস্য জানতেই পারবে না"
মারিয়া এতোক্ষন চুপ করে ছিলো।
এইবার বলল...." আমরা নিজেরাই মানরিসাদের ধ্বংস করার চেষ্টা করব" সবাই অবাক হয়ে মারিয়ার দিকে তাকিয়ে আছে।
মারিয়া বলল যে "আমাদের একবার চান্স নেওয়া উচিত। কতদিন আর এইভাবে আর যাযাবরের মত জীবন যাপন করব??? "
আবির কিছুক্ষন পর বলল.... "মারিনা ঠিক বলছে। আমাদের চান্স নেওয়া উচিত।তবে এই খবর যেনো এখান থেকে বাহিরে না যায়।" সবাই বলল " ঠিক আছে।"

ঠিক তখনি ঘন্টা বেজে উঠলো।তাদের এই স্থান ত্যাগ করার সময় এসে গেছে।তারা দ্রুত তাদের যানের দিকে রওনা দিল।তারা ঠিক করল যে যানে বসে তারা মানরিসা দের চিরতরে ধংস করার পরিকল্পনা করবে।..
( চলবে.....)


জাহিদ হোসেন,
শিক্ষার্থীঃ (ইলেকট্রিক্যাল এন্ড ইলেক্ট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং) রাজশাহী প্রকৌশল প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।

Post a Comment

4 Comments

  1. Onnnek onnnek onnnekk valo hoiche....next porber opekkhay roilam❤❤❤❤❤❤

    ReplyDelete
    Replies
    1. ধন্যবাদ, উন্মেষ এর সাথেই থাকুন

      Delete
  2. পরের পর্ব চাই❤❤❤।
    জেরিন নামটার বদল চাই🐸

    ReplyDelete